Thursday, February 26, 2009

আজ : সুমনকুমার দাশের জন্য

১২ ই আগস্ট, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৫
শেয়ার করুন: [Add to digg] [Add to FURL] [Add to blinklist] [Add to reddit] [Add to Technorati] [Add to YahooMyWeb] [Add to Co.mments] [Add to NewsVine] Facebook [new feature]

আমার জীবনে প্রিয় বলতে কোনো কবি, কবিতা, উপন্যাস বা লেখক নাই। প্রিয় শব্দটা দিয়া যা বুঝানো হয় তার মধ্যে একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়া কাজ করে। প্রিয়, প্রিয়তর, প্রিয়তম শব্দগুলো অতিক্রম করতে থাকলে আমরা এমন এক ফলে এসে ঠেকে যাই যেখানে একটা কবিতা, একজন কবি, একটা উপন্যাস বা একজন লেখকের নামই বলতে হয়। কিন্তু এই নির্বাচন দিয়া কী কাজ হয়? আমি যদি বলি আমার প্রিয় কবিতা বনলতা সেন, তবে আমার জীবনানন্দ পাঠে কোনো ক্ষতি-বৃদ্ধি হয় বইলা মনে হয় না। কথাটা আমার নিজের কোনো কাজে লাগে না, আসলে আমি এইটার দ্বারা মুখ্যত অন্যের সাথে আমার রুচি ও বিচার-বিবেচনা শেয়ার করতে চাই। যদি আমি ভুলে হোক বা ঠিক ভাবেই হউক বলেই ফেলি যে, আমার প্রিয় কবিতা বনলতা সেন, তখন সেই প্রিয়তা দিয়া আমার কবিতা পাঠের রুচি, মেজাজ ও মর্জি বুঝা যাইতে পারে। আমি জীবনানন্দকে কিভাবে পাঠ করি সেইটার আলামত পাওয়া যাইতে পারে। সাহিত্য পাঠ করতে গিয়া আমি এই ধরনের কোনো মান খাঁড়া করতে পারি না। কবি বলতে শুধু একজনের ছবি আমার চোখে সহসা ভাসে না। আবার কবিতা বলতে একটা কবিতার কথা শুধু মনে আসে না। কবি ও কবিতা এই দুইটা শব্দ যুগপৎ উচ্চারণ করার সাথে সাথে আমার চারদিকে একটা শব্দ ও সঙ্গীতের একটা কুহুগুঞ্জন শুরু হয়। আমি দেখি, আমি ভাবি আমি অনুভব করি অনেক শব্দ, লাইন, উপমা, পূর্ণ কবিতা, কবি জীবন। একটি বা দুটি নয় অনেক প্রিয় ব্যাপার ঘটে। কোন দুঃখে এই গুঞ্জন থেকে একটা স্বর, একটা কবিতা, একজন কবিকে আমি বেছে নেবো? তাই লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক বন্ধু মোস্তাক আহমদ দ্বীন যখন প্রিয় কবিতা নিয়ে লিখতে বললেন তখন একটু আক্রান্ত বোধ করলাম। একটু সচকিত হলাম। আর বিস্ময়করভাবে রাজি হয়ে গেলাম। ওই রাজি হওয়ার মুহূর্তে আমি জানতাম কোন কবিতা নিয়া আমি লিখতে চাই। আমার প্রিয় যে কোনো কবিতা নিয়েই লিখতে পারতাম। সে সুযোগ ছিল। কিন্তু আমি বিশেষ করে আজ কবিতাটাকেই বেছে নিলাম। জীবনানন্দের কবিতা সমগ্রের যে কোনো কবিতা বেছে নিয়ে এই আলোচনা সম্ভব ছিল। আমার সাহিত্য পাঠে নির্বাচিতের, শ্রেষ্ঠের, সংকলিতের ভূমিকা এত কম যে সেটা করতে পারলেই আমি খুশি হতাম। সেটা আমি করেছি, লটারির মতো করে, আগে অনেকবার। এবার পুরনো, ঘুনধরা জীবনানন্দ-সমগ্র হাতে নিয়ে ওই রকম খেলোয়াড়ি মানসিকতা নিয়ে জাস্ট বইটা হাত থেকে ছেড়ে দিয়ে একটা খোলা পৃষ্ঠার অপেক্ষায় বসে বইলাম। এক সেকেন্ড। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি, আপনারাও পারবেন না, যে কবিতাটা বের হয়ে এলো তার নাম আজ-ই। আজ কবিতাটা সর্বাগ্রে এইভাবে চোখের সামনে খুলে যাওয়ার একটা যুক্তিসংগত কারণও আছে। সেটা একটা অ্যাকাশিয়া গাছের পাতার কাহিনি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমি কোনো এক বিকালে ঘাসের বিছানায় শুয়ে বসে কবিতাটা কাউকে শুনিয়েছিলাম বা নিজে পড়েছিলাম। আর সেই পাঠ, শোনানোর অবসরে আজ কবিতার শুরুতে একটা অ্যাকাশিয়া পাতা সন্তর্পণে ঢুকে গিয়েছিল অথবা আমিই রেখেছিলাম।
তাই আজ আজ নিয়েই লিখছি। একটি প্র্রিয় কবিতা হওয়ার জন্য বড় সংক্ষিপ্ত হওয়া দরকার কবিতার তার চেয়ে কিছুটা বড় আজ। ৩২০ লাইনের কবিতাটা কণ্ঠস্থ করার বাসনা থেকে বহুবার আমি এটা পড়েছি। সফল হইনি। কিছুটা কণ্ঠস্থ ও কিছুটা আত্মস্থ করে রেখে দিয়েছিলাম। আজ আবার সামনে মেলে ধরলাম।
আজ কবিতার লক্ষ্য মৃত্যু, মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিত্রান বা নাজাতের যে ধারণা তার সঙ্গে জীবনানন্দের ডিবেট। এবং মৃত্যুর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক অনুসন্ধান। জীবনের প্রতি লিপ্ত থেকে মুত্যুকে মোকাবিলা করার প্রতিজ্ঞা। কবি এইখানে নাজাতের রাস্তা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। জীবনকে ক্লেদ, কর্দম, প্রেম ও কাম সহকারে যাপন করার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন। ঊনিশ শতকের এনলাইটমেন্টের ফলাফলের মধ্যে বেড়ে ওঠা কবি জীবনাননন্দের মনে কেন এই সংকল্প, প্রশ্ন ও প্রতিজ্ঞা তৈরি হয়েছিল সেটা চিন্তা করে আমি ভীষণ অবাক হয়েছি। পরিপ্রেক্ষিতটা একটু মনে করা যাক। ঊনিশ শতকের আলোছায়ায় পরিপূর্ণতা পাওয়া কলকাতার চিন্তা ও চেতনা মূল সুরের মধ্যে, তার সমস্ত নির্যাস আত্মস্মাৎ করে জীবনানন্দ কবি হয়েছিলেন। ভারতীয়, বঙ্গীয়, বরিশালী চেতনা তার মধ্যে কাজ করেছে কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুই চেতনার মিথষ্ক্রিয়ায় তার কবিতা তৈরি হয়েছে। মিথষ্ক্রিয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে দেখি যে সংঘর্ষের চাইতে সংশ্লেষই বেশি। পারিবারিকভাবে তারা ব্রাহ্মসমাজের সদস্য, যে ব্রাহ্মসমাজ তৈরি হয়েছিল হিন্দু সংস্কৃতির একেশ্বরবাদী নির্যাস থেকে, কিছুটা উপনিবেশ ও কিছুটা খিস্টীয় প্রভাব থেকে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে খ্রিস্টীয় নাজাত ও যিসাসের জীবনের মূল সুরের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার মতো চেতনা অর্জন করা ওই সময়ের একজন ব্যক্তির পক্ষে অসম্ভব ছিল। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার আছে। আজ কবিতার বহুপাঠে এটা সহজবোধ্য হয় যে, জীবনানন্দ সেই সময় এনলাইটমেন্ট, উপনিবেশ ও ক্রিশ্চিনিয়াটির মধ্যে একটা সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন। আর এর বিরুদ্ধে দাঁড়াবার জন্য যে ধর্মপদ্ধতির সঙ্গে নিজের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন তার নাম পেগানিজম। ধর্ম সংঘাতের এক ঐতিহাসিক সূত্রের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন। নিজের হিন্দুত্বের সঙ্গে পেগানিজমের সাদৃশ্য থেকে তিনি নিজেকে পেগান বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
মনে পড়বে, তিনি এক জায়গায় বলেছিলেন, 'কাফিরের ছেলে আমি...।' আর আজ কবিতায় তিনি বলছেন, 'বধির নরক, শোনো, আমি এক অধীর পেগান।' শুধু নাজাত বা পরিত্রাণের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি তার ভাষ্য রচনা করছেন না। পেগানদের সঙ্গে খ্রিস্টানদের ঐতিহাসিক সংঘর্ষের রেফারেন্স দিয়ে রীতিমতো একটি ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছেন। এবং এই ধর্মযুদ্ধে মূর্তিপূজক হিন্দুর ভাই মূর্তিপূজক পেগান। যারা খ্রিস্টানদের দ্বারা পেগান বলে আখ্যায়িত, পেগান শব্দের অর্থ সাধারণ গ্রামীন মানুষ। তুচ্ছার্থে এই মানুষদের ধর্মকে চিহ্নিত করতে পেগান ধারণাটির উদ্ভব। শুধু গ্রিস নয় বিশাল একটি প্রাচীন ধর্মব্যবস্থাকে একত্রে পেগান বলে আখ্যায়িত করা হয়। হিদেন, কাফির, পেগান প্রায় সমার্থবোধক শব্দ। মুখ্যত এই পেগানিজমকে পরাভূত করেই আব্রাহামের উত্তরসুরিদের ধর্মগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু পেগানদের বিরুদ্ধে ক্রিশ্চিয়ানদের যুদ্ধই বেশি আলোচিত হয়। এবং অবাক করার বিষয় হলো, ভারতে ইসলামের উপস্থিতি সত্ত্বেও জীবনানন্দ ইসলামের বিরুদ্ধে না বলে খ্রিস্টীয় পরিত্রান জিসাসের জীবন ও দর্শন বিষয়ে উচ্চকিত হয়েছেন।
জীবনানন্দ বলছেন পেগানদের সঙ্গে খ্রিস্টানদের সংঘর্ষের কথা :
সকল ঘোড়ার খুর গিয়েছে রোমের দিকে ছুটে,-
সকল পেগান রোম তাদের পায়ের তলে পিষে
সকল পেগান গ্রিস তবুও ঘুমের থেকে উঠে
আবার ওঠেনি জেগে পুরনো পেগান সেই গ্রীসে!
কারণ নতুন আলো এনেছে নতুন এক ত্রাণ,-
আর কেহ রহিবে না অ্যাপেলোর মতোন পেগান।
.....
(ভেনাসের উদ্দেশে বলছেন :)
.....
সমুদ্রের পাপ থেকে তুমি আর উঠিবে না ফুটে,
ফুটিবে না তুমি আর হৃদয়ের সাগরের বিষে!

তোমার চোখের পানে চেয়ে লোক হবে না মলিন,
(কারণ),
তোমরা পাথর আজ, - তোমরা হয়েছ আজ কাঠ!
রোমের মেসায়া সে যে,- পৃথিবীর সে একা সম্র্রাট!
আগুনের মতো সে যে, - তোমরা তাহার কাছে তৃণ-
তোমরা তৃণের মতো আগুনে আগুনে শেষ হ'লে!

কিন্তু কবির পরিত্রাণ দরকার নাই। উনি পরিত্রাণ অস্বীকার করে ফিরে এসেছেন। তীব্র ক্ষোভ সহকারে তিনি বলছেন,--

'এ হৃদয়ে নাই কোনো ক্রশকাঠ ধরিবার শখ
পাপের হাত থেকে চাই নাকে কোনো পরিত্রাণ!'

বলেন,
আমি তবু মেসায়ার হাত ছেড়ে আসিয়াছি চলে-
ঘুরায়ে নিয়েছি ঘোড়া রোমের পথের থেকে আমি,

......
যাহারা রোমান ছিল মার্চ করে তারা আজি যায়
তোমার রাজ্যের দিকে,- তোমার ক্রুশের 'পরে সবে-
চুমো দিয়ে চলে যায় চুপে চুপে বেলা-অবেলায়,-
আমারো কি সেই ক্রুশে একবার চুমো দিতে হবে?
যে ঠোঁটে আগুন আছে, যেই ঠোঁটে নাই কোনো জল
তাকে তুমি করিবে কি বরফের মতোন শীতল!





প্রকাশ করা হয়েছে: কবিতা বিভাগে ।



* ৯ টি মন্তব্য
* ১৮৫ বার পঠিত,

Send to your friend Print
রেটিং দিতে লগ ইন করুন
পোস্টটি ৩ জনের ভাল লেগেছে, ০ জনের ভাল লাগেনি


এই লেখার লিংক টি আপনার বন্ধুকে পাঠান বন্ধ করুন





এই লেখার লিংক টি আপনার বন্ধুকে পাঠান বন্ধ করুন

আপনার নিজস্ব ই-মেইল ক্লায়েন্ট ব্যবহার করতে চাইলে এখানেক্লিক করুন

আপনার নাম :

আপনার ই-মেইল

আপনার বন্ধুদের ইমেইল

মেসেজ (নীচের মেসেজটি আপনার ইচ্ছেমত পরিবর্তন করুন
hi, i have been reading a nice wonderful post in http://www.somewhereinblog.net and would like to share it with you. Here is the post link http://www.somewhereinblog.net/blog/mahbubmoreblog/28830165 , please visit the link and rate it if you like. :-)

নিজেকেও একটি কপি পাঠান



১. ১২ ই আগস্ট, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৬
comment by: মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন: শেষ হইলো না। কাইলকা শেষ করবো।
২. ১২ ই আগস্ট, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:১৭
comment by: কেএসআমীন বলেছেন: কাইলকার অপেক্ষায় থাকলাম...

আছেন কেমন?
৩. ১২ ই আগস্ট, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:১৮
comment by: মোহাম্মদ আরজু বলেছেন: 'প্রিয়' কি-ওয়ার্ডে কোনো লেখককেই ফেলতে পারি না। যদিও প্রিয় কবিতা-গল্প-উপন্যাস-নাটক-আত্মজীবনি আছে অনেক।
---------------

শেষ করেন। কালকে পড়বো।
৪. ১২ ই আগস্ট, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২৪
comment by: গিফার বলেছেন: বস আরিফ জেবতিক ভাই মেয়র পদে দারাচ্ছেন নাকি ফেইসবুকে গ্রুপ দেখলাম তাহারে একটা ভোট দিয়েন....

Vote ARIF JEBTIK for Dhaka city mayor
Click This Link
৫. ১২ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ৮:৩০
comment by: সফেদ ফরাজী...... বলেছেন: আমরাও কালকা বাকিটা পড়বো।
৬. ১৪ ই আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ২:২৫
comment by: মেহরাব শাহরিয়ার বলেছেন: হুমমম
৭. ১৪ ই আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ২:২৯
comment by: মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন: লিখবো। কাইলকা অবশ্যই লিখবো।
৮. ১৪ ই আগস্ট, ২০০৮ দুপুর ২:৪০
comment by: ফারহান দাউদ বলেছেন: কালকে টা কবে?
১৪ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ১১:৫২

লেখক বলেছেন: টুমরো উইল নেভার কম টু ইউর লাইফ। কাল শুধু পিছায়া যাইতেছে।

No comments:

Post a Comment