Tuesday, March 3, 2009

৪. এ পোর্ট্রেইট অফ এ ইয়াং আর্টিস্ট অ্যাজ এ মিডিওকার

২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৪০
শেয়ার করুন: [Add to digg] [Add to FURL] [Add to blinklist] [Add to reddit] [Add to Technorati] [Add to YahooMyWeb] [Add to Co.mments] [Add to NewsVine] Facebook [new feature]

তৃপ্তির লিখবা নাকি কথাটার মধ্যে কেমন একটা প্রলোভন কাজ করে। লাল শাড়ি পরা তৃপ্তি সমানে ড্রেসিং টেবিলের একটা কোনায় খুব কৌশলে বসে আছে। আয়নায় মাথার এক ঝাঁক চুলের প্রতিবিম্ব। লিখবা নাকি কথাটার মধ্যে কেমন একটা মায়া থাকে। সেই মায়াটার কথা ভাবতে ভাবতে হাতের কাপটা টেবিলে রাখি আমি।
লিখতেই তো চাই। বলতে বলতে তৃপ্তির দিকে এগিয়ে যাই।
নট নাউ। তৃপ্তি বসা থেকে হঠাৎ করে উঠে পড়ে।
আমিও কথাটাকে ঘুরিয়ে স্বগোতক্তির মতো বানিয়ে ফেলি। লিখতেই তো চাই। লিখতেই তো চাই রে ভাই। আর কথা বের হয় না মুখ থেকে।
আপাতত তৃপ্তির বর্ণনাটাকুই। আর মৌলভীবাজার সফর নিয়ে আর কিছু ভাবতে পারি না। অনেক কিছু ঘটেছিল সেবার, এইটুকু শুধু মনে হয়। কী কী ঘটেছিল আর মনে করতে পারি না। আমার এই রকম হয়। লিখতে গেলে, কখনোই একটা গল্প বা উপন্যাসের পুরোটা ভেবে উঠতে পারি না। একটা লাইনই হয়তো শুধু মনে থাকে। অথবা শুধু একটা আইডিয়াই। ব্যাস। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর কাহিনীর একটা লাইন হয়তো মনে আসে। তারপর সেটাকেই ফেনিয়ে তুলতে থাকি। ডিটেইলিং করতে গেলেই অস্থির লাগে। এই যেমন এখন, যে ট্রেনে করে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল গিয়ে নামলাম সে ট্রেনের কথা কিছুতেই মনে পড়ছে না। তৃপ্তি চট করে বলে ফেলতো। আর একটা কাহিনীও তো লাগে। শুধু এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেলে তো উপন্যাস হয় না। কাহিনীটা ভেবে উঠতে অনেক সময় লাগে। নিজের প্রকাশিত বইগুলোর দিকে তাকিয়ে গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। গল্পের তিনটা বই দুইটা ছোট উপন্যাস। একটা প্রবন্ধের বই। সাকুল্যে পাঁচ। বইগুলোর দিকে তাকালে মাঝে মাঝে মনে হয় এগুলো হয়তো অন্য কারো লেখা। আমি হয়তো সত্যিই কোনো বই লিখে উঠিনি। হয়তো সত্যিই কোনো বইয়ের পুরোটা এক সাথে ভেবে ওটার ক্ষমতা আমাকে দেয়া হয়নি। তৃপ্তির সঙ্গে বিয়ের চার বছর হলো। এক ডায়রি লেখা ছাড়া আর কিছু আমাকে লিখতে দেখেনি সে। লেখক হিসেবেই আমাকে পছন্দ করেছিল। কিন্তু লেখার টেবিলে লেখক দেখতে কেমন তার সংকটগুলো কেমন সেটা তৃপ্তি এখনও দেখেনি। দেখলে লেখার প্রতি এতটা আগ্রহ ধরে রাখতে পারতো না। হয়তো পারতো। তৃপ্তির চাওয়ার মধ্যে কোনো ঘাটতি নেই। মনে প্রাণেই সে চায় একটা কিছু লিখতে বসি আমি। তাকে নিজের বইগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। হাতে নিতে সাহস হয় না। তৃপ্তি এসে পড়লে খুব লজ্জা পেয়ে যাবো। ৩৭ বছরে পাঁচটা বই। কম কিন্তু লিখিনি। ত্রিশটার ওপরে গল্প। বাংলা সাহিত্যে মনে রাখার মতো গল্প কি একটাও হয়নি? এ প্রশ্নের উত্তর এখনি আমাকে কেউ দেবে না। হয়তো জীবিত অবস্থায় উত্তরটা জেনেও যেতে পারবো না। তাতে কী? এই একান্ত গোপন ভাবনাটুকু মুহূর্তের মধ্যে অনেক দিন পর ভেবে বসি আমি। পুরনো দিনগুলোর কথা ফ্লাশব্যাক হয়ে চারদিকে ঘুরতে থাকে। আজকের দিনটা যেন কেমন। ম্যাড়মেড়ে একটা শনিবার। একটুকুতেই ক্লান্ত লাগে। বাইরের হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাস শীতল। শীতের মধ্যে এতটা ক্লান্তি কিন্তু আসার কথা না। তবু আসে।
তৃপ্তি এসে সামনে দাঁড়ায় হঠাৎ।
কই ছিলা?
মানে কী? কই ছিলা মানে কী? রাতে খেতে হবে না। তার জন্য রান্না করতে হবে না?
ওর গলা শুনে আবারও লিখবা না, কথাটা মনে পড়ে।
না। আজ থেকেই শুরু করতে হবে। আইডিয়াটা ভাল। আদিবাসী একটা জনগোষ্ঠীর উৎসবে যাচ্ছে কয়েকজন লেখক, কবি, শিল্প। সঙ্গে স্ত্রী, বান্ধবী। সেখানে গিয়ে একটা তুন উপলদ্ধি হলো তাদের মধ্যে। একটা ফাইল করা দরকার। মনিপুরীদের উৎসব, মৌলভীবাজারের ল্যান্ডস্কেপ নিয়ে তথ্যগুলো ফাইলে সেঁটে রাখতে হবে। আর ডায়রির ওই অংশটা পড়ে ফেলতে হবে। সেগুলোও ফটোকপি করে, ফাইলে সেঁটে রাখতে হবে। কথা বলতে বলতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়লে তৃপ্তি আস্তে করে সরে পড়ে। খুব নিঃশব্দে, বিড়ালের মতো। পৃথিবীতে তিন ধরনের নারী আছে। এক ধরনের নারী বিড়াল ভয় পায়। এক ধরনের নারী বিড়াল ভালোবাসে। তৃতীয় ধরনের নারীরা নিজেরাই বিড়ালের মতো। কে বলেছিল কথাটা? তৃপ্তি চলে যাওয়া দেখে হঠাৎ মনে পড়ে যায়। কয়েকজন মানুষের উইকএন্ড, ছুটি কাটনো, শহরের বাইরে যাওয়া, সেখানে গিয়ে তাদের নতুন কোনো উপলদ্ধি খুব কমন একটা ফেনোমেনা। অরণ্যের দিনরাত্রি। সুনীলের উপন্যাস, সত্যজিতের সিনেমা। এমনকি গৌতম ঘোষের আবার অরণ্যের কথা মাথায় চলে আসে। মুখের ভেতর একটা তিক্ত ভাব জাগে হঠাৎ। সিগারেট খেলে ভাল হতো। কতদিন সিগারেট খাই না। শরীরের ফ্যাট বাড়বে বলে হুইস্কিও অকেশনালি খাওয়া হয়। জীবনটা খুব সাজানো গোছানো হয়ে গেছে। মুখের তিতা ভাবটা দূর করার জন্য ডাইনিং টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে নিয়ে খাই। শব্দ পেয়ে তৃপ্তি রান্নাঘর থেকে উঁকি দেয়। ওর মুখ দেখে বলে ফেলি, অরণ্যের দিনরাত্রির মতো হয়ে যাবে। তৃপ্তি রান্না ঘর থেকেই উত্তর দেয়,
মৌলভীবাজারে অরণ্য কই পাইলা?
অরণ্য না থাকলেও আইডিয়াটা খুব কমন লাগে না। কয়েকজন বন্ধুর উইকএন্ড কাটানো। পরস্পরের মধ্যে সংঘাত, সংঘর্ষ, তারপর নতুন উপলদ্ধি নিয়ে ফিরে আসা।
তুমি নতুন কিছু ভাবে না কেন? একদম নতুন কিছু।
নতুন কিছু ভাবতে না পারলে আইডিয়াটা দাঁড়াবে না, স্পষ্ট বুঝতে পারছি। কিন্তু কী সেই নতুন কিছু? তৃপ্তির কথার আর কোনো উত্তর না দিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে পড়ি আমি।
তোমাকে হেল্প করি।
নো নিড। আচ্ছা এক কাজ করো। ফ্রিজ থেকে বাটা মশলার বাটিটা নিয়ে আসো।
এইটুকু কাজ করার পর তৃপ্তি আমাকে ঠেলে বাইরে পাঠিয়ে দেয়।
নাউ গো। গেট লস্ট।



প্রকাশ করা হয়েছে: ফিকশন বিভাগে ।



* ২৮ টি মন্তব্য
* ২৯৩ বার পঠিত,

Send to your friend Print
রেটিং দিতে লগ ইন করুন
পোস্টটি ৪ জনের ভাল লেগেছে, ৫ জনের ভাল লাগেনি


এই লেখার লিংক টি আপনার বন্ধুকে পাঠান বন্ধ করুন





এই লেখার লিংক টি আপনার বন্ধুকে পাঠান বন্ধ করুন

আপনার নিজস্ব ই-মেইল ক্লায়েন্ট ব্যবহার করতে চাইলে এখানেক্লিক করুন

আপনার নাম :

আপনার ই-মেইল

আপনার বন্ধুদের ইমেইল

মেসেজ (নীচের মেসেজটি আপনার ইচ্ছেমত পরিবর্তন করুন
hi, i have been reading a nice wonderful post in http://www.somewhereinblog.net and would like to share it with you. Here is the post link http://www.somewhereinblog.net/blog/mahbubmoreblog/28765017 , please visit the link and rate it if you like. :-)

নিজেকেও একটি কপি পাঠান



১. ২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫১
comment by: শাওন বলেছেন: মাঝখানে ২ পর্ব মিস করেছিলাম , ঐ দুটা পড়ে এটা পড়লাম । কঠিন হচ্ছে
২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫১

লেখক বলেছেন: থ্যাংকস এ লট।
২. ২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫৩
comment by: ফ্লোরা ফেরদৌসী বলেছেন: জি মেইল এর একাউন্ট খোল
২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫২

লেখক বলেছেন: ওকে বস।
৩. ২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৫৫
comment by: মিরাজ বলেছেন: পড়ছি ।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫৩

লেখক বলেছেন: থ্যাংকস।
৪. ২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০৪
comment by: এম.এ.হামিদ বলেছেন: ষ্টিকি করা হউক
২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫৪

লেখক বলেছেন: etodin koi aachilen m a hamid?
৫. ২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩২
comment by: ছক্কা হাজী বলেছেন: হ, স্টিক ইন হিজ.......
২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫৬

লেখক বলেছেন: নিউ?
কোন স্টাইলে ব্লগিং হবে?
রানডম পোস্ট?
নাকি ইরিটেটিং কমেন্ট?
নাইস টু সি ইউ।
৬. ২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩৪
comment by: ছক্কা হাজী বলেছেন: ডাইরিতে কি হাছা লিখো মুরছেদ মিয়া ?
হাছা লেখলে তো বউয়ে ফালাইয়া জাইবো।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫৯

লেখক বলেছেন: হাজী তো দেখি খুব অ্যাকটিভ হইছো। ভাল।
৭. ২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৮:৩৮
comment by: হট্টগোল বলেছেন:

শুধুই মুগ্ধতা।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:২২

লেখক বলেছেন: আমি আপনার প্রতি মুগ্ধ।
৮. ২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:১৯
comment by: সাতিয়া মুনতাহা নিশা বলেছেন: ওয়েটিং-এ রাখলে দেখি পাঠকের মুগ্ধতা বাইড়াই যাইতাসে.......
২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:২৩

লেখক বলেছেন: তাই তো।
৯. ২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১১:৫০
comment by: মাথামোটা বলেছেন:
মাইনাস।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:৫৫

লেখক বলেছেন: স্যান্ডেল ছাড়াই মাইনাস। স্যান্ডেল ছাড়া আপনারে মানায় না।
১০. ২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:২৫
comment by: ফারহান দাউদ বলেছেন: আছি।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:৫৭

লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ।
১১. ২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৮ সকাল ৭:৪৭
comment by: ছক্কা হাজী বলেছেন: এ্যানিথিং উইল গো ব্র ...
ইট উইল শো অন টাইম..
২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:৫৬

লেখক বলেছেন: দেখা যাক কী করো।
১২. ২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:২৪
comment by: মৃদুল মাহবুব বলেছেন: হু। আজকের টা পোষ্ট করেন।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:৫৮

লেখক বলেছেন: আজকে হবে কি না বুঝতেছি না।
১৩. ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১২:৫৫
comment by: মেহরাব শাহরিয়ার বলেছেন: পরেরটা ? আবার কি হারিয়ে গেলো ?
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১:৫৫

লেখক বলেছেন: haray nai.
ektu basto somoy jaiteche to.
tai.
১৪. ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১:৪২
comment by: মুয়ীয মাহফুজ বলেছেন: মজার হচ্ছে।+

আচ্ছা পোট্রেট অফ এ ইয়াং আর্টিস্ট নামে জেমস জয়েসের একটা উপন্যাস পড়েছিলাম,অন্ততঃ নামকরণের ক্ষেত্রে আপনি একটু প্রভাবিত বলে মনে হলো।মানে বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে সেটা একটা বালকের আর্টিস্টে রুপান্তর হবার কথা বিবৃত হয়েছিলো।আর আপনার প্রেক্ষাপট একেবারে আলাদা হলেও একজন শিল্পির বেড়ে ওঠাই বটে।
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:০২

লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ মুয়ীজ।

No comments:

Post a Comment