Monday, March 2, 2009

এখনকার বাংলাদেশের কিছু লেখা নিয়ে আন্দাজ ০ দেবেশ রায়

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:৩৬
শেয়ার করুন: [Add to digg] [Add to FURL] [Add to blinklist] [Add to reddit] [Add to Technorati] [Add to YahooMyWeb] [Add to Co.mments] [Add to NewsVine] Facebook [new feature]

পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিমবঙ্গের কাছে ছিল এতোটাই অপ্রবেশ্য যে, মধ্যপঞ্চাশের যুক্তফ্রন্টের কয়েকটি দিন ছাড়া আমরা কোনো জানালাই পাইনি, দেখতে যে কী ঘটছে, দেশটার সাহিত্য শিল্পে মননকর্মে। ওই যুক্তফ্রন্টের এক ফাঁকে সুভাষ মুখোপাধ্যায়, দীপেন্দ্রনাথ এসে দেখে গিয়ে বললেন, ‘আমরা যেন বাংলাদেশের চোখের দুটি তারা’ আর লিখলেন ‘সূর্যমুখী’ বন্দি ইলা মিত্রকে হাসপাতালে দেখে এসে। ঢাকা বাংলা একাডেমির কথা একটু কানে আসতেই সে কী আনন্দ। কী স্বস্তি। যাক, পূর্ব পাকিস্তান তাহলে পূর্ব বাংলাই আছে। আমাদেরই দেশ।
সত্যি বলতে কী, পূর্ব পাকিস্তানের যে লেখকের লেখা ও নাম প্রথম আমরা পশ্চিমবঙ্গে শুনেছিলাম, তিনি হাসান আজিজুল হক। তাঁর কয়েকটি গল্প পশ্চিমবঙ্গে ছাপা হতেই হৈহৈ করে উঠলাম।
হাসানই আমাদের চেনা ও পড়া পূর্ব পাকিস্তানের আদি লেখক। তারপর ’৭০-এর আগেই হাতে আসে ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ আর ‘চিলেকোঠার সেপাই’, তবে কিছুকাল পরে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আর হায়াৎ মামুদের রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক একটি বই। আমার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ইলিয়াসের কী একটা বিনিময় ঘটেছিল শান্তিনিকেতনের দিলীপ নামে একটি ছেলে মারফত। ইলিয়াসের চিঠিপত্রে আমার ছোট ভাই সিদ্ধার্থের কথা আছে অনেকবার। সেই দিলীপ কলকাতা-ঢাকা যাতায়াত করতো নিজের নানা কাজে। ফিরতো এসব বই নিয়ে। যাঁরা পূর্ব পাকিস্তানকে পূর্ববাংলাই ভাবতেন, তাঁদের সকলেরই এমন একটা করে দিলীপ ছিল। ফলে আমাদের দিলীপরা যে একটু-আট্টু খবর জোগাতো, তাতেই আমরা আহা-মরি করে উঠতাম। এক ভাষার দুটো দেশ তো আরো আছে। এ কারণে দুই দেশের বইপত্রের বাণিজ্য নিষিদ্ধ হতে পারে? অথচ তেমন নিষিদ্ধতার মধ্যেই তো আমাদের পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বইপত্রের বাণিজ্য যেমন নিষিদ্ধ ছিল ‘বাংলাদেশ’ হওয়ার আগের প্রায় কুড়ি বছর ৫০ থেকে ৭১। এমন ফ্যাসিস্ট নিষেধ শুধু এটুকুই প্রমাণ করে দেশভাগের শর্তে স্বাধীনতার পেছনে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ বা জাতীয় ধর্মীয়তাবাদের চাইতেও জঘন্য ও ঘৃণ্য কোনো উদ্দেশ্য কাজ করেছেÑ যেমন করেছিল পশ্চিম ইওরোপে, সভিয়েট বিপ্লবের পর (১৯১৭)। সভিয়েট সংক্রান্ত কোনো বই ঢুকতে দেয়া হতো নাÑ ইওরোপিয়ান কলোনিয়াল শক্তিগুলোর সাম্রাজ্যের কোনো কোণে। বিপ্লবের প্রখ্যাত দেশ ফ্রান্স, গণতন্ত্রের কর্ণ আদিপিতা ইংল্যান্ড, বিশ্ব আবিষ্কারের প্রধানতম অভিযাত্রী স্পেনÑ এই যাদের সমগ্র সাম্রাজ্যে আলো দিতে সূর্যকে উঠতে হতো দিনে দু’বার রিফর্মেশন আর এনলাইটেনমেন্টের আলোতে আধুনিক সভ্যতার দীপ্যমান প্রতিনিধি এসব দেশ এমন বর্বর ব্যবস্থা নিয়েছিল সভিয়েটের বিরুদ্ধে যে সভিয়েট সংক্রান্ত কোনো বই কোথাও আনা চলবে না।
ষোল বছরও কাটেনিÑ হিটলার নাৎসিরাজ তৈরি করল, ইওরোপের হৃৎপি- জার্মানিতে আর তার সরকারি ও আধাসরকারি, আধামিলিটারি সব বাহিনী বই পুড়িয়ে বিজয়ের বহ্নুৎসব করল রাস্তায় রাস্তায়। হিটলারকে নতুন করে নিন্দা করা যাবে কী করে? ইওরোপই তো শিখিয়েছে জ্ঞান ও সৃষ্টির চাইতেও বেশি দরকারি জ্ঞান ও সৃষ্টি ঠেকিয়ে দেয়া, যদি সেই জ্ঞান ও সৃষ্টি সাম্রাজ্যের ভিতে উইপোকার ভাঙন ধরিয়ে দেয়।
তার পরিণতি আমাদের এই উপমহাদেশের পক্ষে হয়েছেÑ ক্রম ঘন অভেদ্য অন্ধকারÑ সে অন্ধকারে যারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছি তারা প্রতিধ্বনি শুনেও নিজের স্বর চিনতে পারি না।
ফলে পরস্পর সম্পর্কে, ভারত ও পাকিস্তান নিñিদ্র অজ্ঞানতার দেয়াল তুলেছি। যে দেশভাগ নিয়ে ভারতীয় ইউনিয়নের লেখক তাত্ত্বিকরা সবচেয়ে সরব ও পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের লেখক তাত্ত্বিকরা প্রধানত নীরবÑ আমরা পরস্পরের এই খবরটুকুও রাখতে পারিনি কার ক্ষত কতো গভীর ও নিরাময়ের কতো অতীত। এই কথাটি আমাকে সবচেয়ে অসহায় অপরাধী করে ফেলেছে। সেই অপরাধবোধ থেকে কিছুতেই মুক্তি পাই না। ভারতের সাহিত্য অ্যাকাডেমির অনুরোধে দেশভাগÑ স্বাধীনতার দুই খ- গল্প সংকলন আমাকে তৈরি করতে হয়েছিল। ফলে আমাকে পড়তে হয় বঙ্গভাষার বহু বহু লেখা। পড়তে পড়তে আবিষ্কার করি যে লেখকদের মধ্যেও পাঞ্জাবি ও উত্তর প্রদেশি হিন্দু ও মুসলিম, বিশেষ করে উর্দুভাষী লেখকদের কারো কারো মনে ও কখনো মাথায়ও দেশভাগের কারণে ক্ষত স্থায়ী হয়ে গেছে, এতোগুলো বছর জুড়ে সেই ক্ষত নানারকম নালি ও জালি তৈরি করেছে তাঁদের শরীরে ও তাঁদের রক্তক্ষরণ মুহূর্তের জন্যও থামেনি। তার চাইতেও বিস্ময়কর সেই রক্তক্ষরণ ও ক্রমবিস্তারি ক্ষত মন ও মাথার কোনো বিকারের শিকার তাঁদের করেনি, বরং তাঁরা যেন শিব বা মঙ্গলকে বরণ করতে পার্বতীর মতোই এক দুঃখবতী তপস্যায় নিজেদের শীর্ণ ও শুদ্ধ করেছেন। তাঁদের লক্ষ্য দেশ ও খ-তার সেই অন্বয়ে পৌছানো, যে অন্বয়ের ইঙ্গিত কালিদাস করেছিলেন ‘রঘুবংশ’ কাব্যের প্রথম শ্লোকে, ‘বাগর্থদিব সম্পৃক্তৌ পার্বতী পরমেশ্বর’। কতো লেখকের নাম বলবো? তাঁদের মধ্যে নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ ইনতিয়াজ হোসেন।
অজ্ঞতার এই পাহাড় মাথায় নিয়ে বাংলাদেশের গল্প-উপন্যাসের ঐতিহাসিক ক্রম, সেই ক্রমের কার্যকারণ, তার জোর-অজোরের জায়গাগুলি নিয়ে এমনকী কোনো ব্যক্তিগত মন্তব্যও করতে পারবো না। যদিও বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যের বিশেষত গল্প-উপন্যাসের আমি তদ্গত পাঠক। কিন্তু তেমন পড়া থেকেও কোনো ঐতিহাসিক তাত্ত্বিক হিসেবে নিজেকে জাহির করা যায় না।
তাহলে এ নিয়ে আমি কথা বলতে এসেছি কেন? সেই কারণটা একেবারেই ব্যক্তিগত আমি এসেছি সেই ব্যক্তিগতকে একটু প্রকাশ্য করে নিতে। কথাটা ঠিক কি বেঠিক সেটা যাচাই করতে আমি আসি নি। আমি যাচাই করতে চাইÑ কথাটা কি এমন করে ভাবা যায়।
ঘটনাটা হলো, বছর চার আগে, ‘আজকের কাগজ’-এর সাহিত্য সম্পাদক শামীম রেজা আমার কাছে কলকাতায় দুটি বই পাঠানÑ সালমা বাণী নামে এক লেখিকার একটি গল্পের বই ও একটি উপন্যাস। আমি এঁর নামই শুনিনি। এঁর বই দুটি পড়ে বাংলাদেশের এমন ততবেশি নাম না জানা লেখকরা কী লিখছেন আরো সেটা জানার জন্য খুবই অস্বস্তির মধ্যে পড়ি। কারণ এঁদের কারো কারো নাম যদি বা জোগাড় করা যায়, বই জোগাড় করা অসম্ভব। বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখকদের বইই কলকাতায় পাওয়া যায় না। আর এঁদের বই কোত্থেকে পাবো। কলকাতার যে বন্ধুবান্ধবদের নিয়মিত বাংলাদেশে যাতায়াত আছে ও যারা আমাকে নানা বিপদে সাহায্য করেছেন, তাঁদের অনুরোধ করলাম। তাঁরাও চেষ্টা করে বললেনÑ ‘আপনার তালিকার লেখকদের নামই কেউ শোনে নি, বইয়ের কথা তো ওঠেই না।’ কলকাতায় আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে যাঁরা বাংলাদেশের অনেক বিষয়ের খবর রাখেন গভীরে তাঁদের বললাম। তাঁরাও কিছু জানেন না।
কিছু লেখা পড়ার জন্য এতোটা আকুল হচ্ছিলাম কেন? কারণ আমি আঁচ পাচ্ছিলামÑ বাংলাদেশের গল্প-উপন্যাসে একটা গোপন অভিযান ঘটছে।
যাহোক, শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু বই আমি জোগাড় করতে পেরেছিলাম আর সেগুলি পড়ে আমার ধারণা আরো জোর পেল। বাংলাদেশের গল্প-উপন্যাস বদলে যাচ্ছে। এমন হতে পারেÑ আমার ধারণাটা ভুল। এমনও হতে পারেÑ আমার ধারণাটা মনগড়া। আর এমন তো হয়েই আছে যে ধারণা তৈরি করার মতো তথ্য আমার আয়ত্তেই আসে নি। তবু আমি এই অতি অল্প তথ্যের ওপর ভর করে আমার নিছকই মনগড়া একটা ধারণা আপনাদের কাছে বলতে চাইছিÑ একজন পুরনো কাঠুরের অধিকারে। অন্তত বায়ান্ন বছর ধরে তো লিখেই যাচ্ছি। সত্যি সত্যি আঙুলে কড়া পড়ে গেছে। কী পেরেছি আর কি পারিনি সেসব হিসেব নিকেশ মনে থাকলে কি আর বায়ান্ন বছর ধরে লিখে যাওয়া যায়? এটাও ভয়ঙ্কর রকম সত্য শারীরিক কারণেই তো বেশিদিন আর লিখতে পারবো না। এক বুড়ে কাঠুরের অভ্যাসে কুড়–ল করাত কাঁধে বন ঢুঁড়ে এসে একটা খবর দিতে চাই ঢুঁড়তে ঢুঁড়তে ফরেস্টের এক জায়গায় কিছু মেহগনি গাছের ভিড় নজরে পড়ল। আমার নজর ভুল হতে পারে। আর ভুল না হলেও ওই মেহগনি গাছে করাত কুড়–ল ছোয়ানোর শক্তি আমার নেই। কিন্তু নজরে পড়ে গেল, জাতে জন্মে কাঠুরে, খবরটা আপনাদের না জানালে অধর্ম হবে। আমি আমার পূর্ব প্রকাশিত ছোট দুটি লেখা পর পর পড়ছি।
এখন কথাটা আমার নিজের কাছে সত্য। তবে, এখনো হয়তো সিদ্ধান্তের মতো করে সাক্ষ্যপ্রমাণ সাজানো যাবে না, সম্পূর্ণ। আমি নিজের মনে এটা জেনে গেছি যে বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্য আর পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সাহিত্য একই বাংলা সাহিত্য নয়। কোনো সহজলভ্য উদাহরণ জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে ইংরেজি>ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কমনওয়েলথ বা স্প্যানিশ, দক্ষিণ আমেরিকার প্রাক্তন স্প্যানিশ উপনিবেশগুলি, আফ্রিকারও ও মূল স্পেন এরকম কোনো যুক্তি সাজাতে চাই না। সম্পূর্ণ আলাদা ইতিহাস, ভূগোল ও সমাজে বাংলাদেশের ও পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য, গত আটান্ন বছর ধরে তৈরি হয়েছে। একই ভাষায় কিন্তু সে ভাষার পৃথক ব্যবহারে। ব্যবহারই ভাষার একমাত্র নিয়ামক। লিপি বা উচ্চারণ নয়। দুই সাহিত্যের পার্থক্যগুলিকে যে যে বিষয়ে এখনো পর্যন্ত আলাদা করতে পেরেছি, তার কয়েকটির কথা বলছি, যদিও মাত্র এই বিষয়গুলির পার্থক্যই দুই সাহিত্যের দ্বিত্বকে প্রামাণিক করে তোলে না। তেমন প্রামাণিক সাক্ষ্যের জন্য দরকার সাহিত্যের ও সমাজের ইতিহাস-গবেষকদের পদ্ধতি ও প্রয়োগ।
১. এমন কী ১৯৪৭-এর আগেও বাংলা সাহিত্যের বিষয়ে এমন ভাগ এখন খুঁজে বের করা যায়, যা পরে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সাহিত্য ও পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা সাহিত্য বলে চেনা হবে। পরবর্তী ইতিহাস এভাবে পূর্ববর্তী ইতিহাসের লুপ্ত অর্থ উদ্ধার করে। বঙ্গ প্রদেশ নিয়ে এখন আমরা ইতিহাসের যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি, সেখানে পৌঁছুলে প্রাক ৪৭ বাংলা সাহিত্যের অন্তর্নিহিত এই পার্থক্য স্পষ্ট হতো না।
২. পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা সাহিত্য থেকে বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্য আর ব্রিটিশ-ভারতের একটি প্রদেশের বাংলা সাহিত্য থেকে ভারতীয় ইউনিয়নের বাংলা সাহিত্য বিকাশের এটা দুই আলাদা প্রক্রিয়া। প্রক্রিয়ার এই পার্থক্যকে নানাভাবে মুছে দেয়া হয়। যেমন বাংলাদেশের সাহিত্যবিকাশের প্রক্রিয়াটিকে এরকম করে ভেবে নিতেই দুই সাহিত্যেরই সমমনাদের ভালো লাগে, সহজও লাগে যে ৪৭ পর্যন্ত, মানে দেশভাগ স্বাধীনতা পর্যন্ত অখণ্ড ও চিরকালীন বাংলা সাহিত্য। ৪৭ থেকে ৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানি বাংলা সাহিত্য ও ৭১ থেকে বাংলাদেশের সাহিত্য অখ- ও চিরকালীন ঐতিহ্যের সঙ্গে নিজেকে আবার মেলাচ্ছে। এমন সাজিয়ে ভেবে নেয়ার চেষ্টায় অনেক গিঁট আছে। একটা দড়িতেই গিঁট পাকিয়ে আছেÑ আর গিঁট খুললেই দড়িটা লম্বা হয়ে যাবে তা নয়। কিছু কিছু গিঁট খোলা গেলে, বা খুলতে খুলতেও দেখা যাবে অনেক গিঁটই বস্তুত ছেঁড়া দড়িগুলোকে জোড়া লাগাবার গিঁট। দড়ি বা বাঁধনটাই নেই।
যেমন, এই একটা গিঁট। বলা হয় না হয়তো, কিন্তু মেনে নেয়া হয়, পশ্চিমবঙ্গে ও বাংলাদেশে ৪৭ সাল পর্যন্ত অখণ্ড বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য রয়ে গেছে ও রয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সাহিত্যেই। এই বড় গিঁটের ভিতরে ছোট গিঁট হচ্ছে ৪৭ থেকে ৭১ পূর্ব-পাকিস্তানি বাংলা সাহিত্য একটা সাময়িক দুর্যোগের সময় হঠাৎ তৈরি খাত ছিল। ওটা তো শুকিয়ে গেছে।
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সাহিত্যকে একই সাহিত্য ধরলে এসব গিঁট খুলবে না।
৩. বাংলা ভাষা বলতে কী বোঝায়? যাকে ‘মান্য বাংলা’ বা ‘প্রমিত বাংলা’ বলা হয় সেটাই কি বাংলা ভাষা? আর যা কিছু বাংলায় লেখা হয় বা যা কিছু বাংলা বলা হয় সবই আঞ্চলিক বা উপভাষা বা বুলি?
এর চাইতে মর্মান্তিক ও সর্বনাশা বিকার বাংলা ভাষার ইতিহাসে ঘটেনি। জলঙ্গীর জল নিয়ে ভাগীরথীর পূর্ব পশ্চিম সাগরে পড়ে। এই জায়গাটির মুখে ভাষাকেই ‘স্ট্যান্ডার্ড কলোক্যাল বেঙ্গলি’Ñ বলেছিলেন সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ১৯২৬-এ। এটা শুধুই মুখের বাংলা নিয়ে বলা। ‘স্ট্যান্ডার্ড’ মানে এখানে ‘চালু’, ‘চলতি’, ‘ভদ্রলোকি’ বা এরকম কিছু। ‘মান্য’ বা ‘প্রমিত’ বিশেষণ ও বাংলার ওপর চড়ানোর ভিতর ছলনা আছে।
কারণ, ১৯৪০ পর্যন্ত তো বাংলা লেখা হয়েছে প্রধানত সাধু ভাষায়। সাধুভাষাই চর্যাপদ থেকে লেখার বাংলা। সুনীতি কুমারই তো সাধুভাষায় লিখতেন। বাংলা ভাষা ও কলকাত্তাই ভাষা সমার্থকÑ এটা সব দিক থেকেই ভুল। এই কথাটাকে স্বতঃসিদ্ধ ধরে নিয়ে যেসব অনুসিদ্ধান্ত তৈরি হচ্ছেÑ সেগুলিও ভুল। গাঙ্গেয় বাংলার বাইরের সব বাংলাই আঞ্চলিক ও উপভাষামাত্রÑ এমন কথার মধ্যে কোনো সত্য নেইÑ না ভাষাতাত্ত্বিক, না সাংস্কৃতিক। সাহিত্যিক তো নয়ইÑ লেখক-কবিকে তাঁর ভাষা তৈরি করে নিতে হয়।
বাংলাদেশে পায়ে হাঁটা পথের বাঁকে বাঁকে ভাষা নতুনÑ (যেন পশ্চিমবঙ্গে নয়)। আর, সে সবের মধ্যে কোনো একটি ভাষা মান্য হয়ে ওঠেনি। যেন তেমন হয়ে ওঠাটা যে কোনো ভাষারই লক্ষ্য। মান্যতাটা ভাষা-সাহিত্যের বিষয়ই নয়, রাষ্ট্র ও সমাজের বিষয়। তাই, গাঙ্গেয় বাংলা, বাংলাদেশেরও বাংলা ভাষা হতে বাধ্য যেনÑ এমন একটা ধারণা গেড়ে বসছে।
এটুকু বললেই যথেষ্ট হওয়া উচিত ছিল সালমা বাণীর ‘বোবা সময় ও নীল উপাখ্যান’ (কাগজ প্রকাশন ২০০৫)-এর গল্প সাতটি পড়তে পড়তে ও সেই পড়ার টানেই বছর খানেক আগে বেরনো তাঁর ‘ভাংগারি’ উপন্যাসটি আবার পড়তে পড়তে এই কথাগুলি মনে হয়েছে। পাঠক তাতেই সংযোগ তৈরি করে নিতে পারতেন, সালমার গল্প এমনই স্বসমুত্থ।
আমি তাই ভাষার উদাহরণ দিতে যাবো না। এ গল্পের দুটি বাক্য পড়লেই বোঝা যায়Ñ গাঙ্গেয় বাংলায় এ গল্প লেখা নয়।
সালমা যে ক্ষমতায় প্রায় বোবা ও অন্ধ করে ফেলেন তার পাঠককে সেটাকে ইংরেজিতে বলা যেতো, ‘সুইপ’ একই সঙ্গে মারের জোর ও ব্যাপ্তি বোঝাতে। মনে হচ্ছে, এই শব্দটিতে তার বৈশিষ্ট্যটিকে ভদ্রসভ্য করে ফেলা হবে। কিন্তু তাতে তাঁর আক্রমণটা বোঝানো যেতো না। আমি আরবি ‘বত্বশ’ শব্দটি নিয়েও ভেবেছি, হঠাৎ জাপটে ফেলে দেয়া বাংলা ব্যবহারে নিশ্চিত হতে পারলাম না। তার চাইতে ডিকশনারির বাইরের একটি শব্দই অনেক ঠিকঠাক মনে হচ্ছে। সালমা তাঁর এই গল্পগুলোতে শুরু থেকেই যে হামলা করেন তাতে পাঠকের চোখমুখ বাতাসে ধুলোয় আটকে যায়, দমটুকু ফেলার সময় পাওয়া যায় না।
‘নীল উপাখ্যান’-এর শুরুর প্যারায়, ‘ব্যতিক্রমহীন নিত্যদিনের নিয়মে’, এমন সচেতন শব্দবিন্যাসের পর, ‘নীলের প্যাকেট এত্ত সুন্দর, এই আনাড়িপনার সংঘর্ষে হামলাটা একটা আরম্ভ রেখায় টলমল করে।
প্রথমবার পড়ার পর ভালো লাগা সত্ত্বেও আমার মনে একটা খচ্ ছিল যে একটু যান্ত্রিক হয়ে যায়নি ইতিহাসের সঙ্গে এখনকার জীবনের এই সংযোগ ঘটানো।
পাল্টা একটা খচ্ও ছিল মনে না কী আমার মনেই অনড় হয়ে আছে ইতিহাসে সংযুক্ত বর্তমানকে যান্ত্রিকতামুক্ত করার কোনো ছক? সেই ছকের ভিতরই গল্পটাকে পুরতে চাইছি?
সালমার হামলা বা বতোয়াসি বলতে চাই যাকে, তাতে কোনটা যান্ত্রিক ও কোনটা অযান্ত্রিক এসব আলঙ্কারিক মাপজোখ যে কোথায় উড়ে যায়।
এখানেও একটা হামলা চলছেÑ বাংলার ‘মান্য’, ‘প্রমিত’ এসব ক্ষমতা কেন্দ্রের ওপর। ওয়ালিউল্লাহ বা মানিক-তারাশঙ্কর বা আমাদের প্রয়াত বন্ধু ইলিয়াসের উপভাষা প্রয়োগের কারণ ও সিদ্ধি থেকে সালমার বাংলাভাষা ব্যবহারে নিজস্বতা অনুমানও করা যাবে না। বিশ শতকের শুরু থেকেই দুনিয়ার প্রায় সব ভাষাই কেন্দ্রীয় ক্ষমতার বিপরীতে ক্ষমতাহীনদের অস্ত্রাগার হয়ে উঠেছে। ভাষা যেন হয়ে উঠতে চায় উপজাতীয়-জাতীয়তার বিরুদ্ধে, জাতীয় যুদ্ধের বিরুদ্ধে, জাতীয় আত্মপরিচয়ের বিরুদ্ধে। এই শতাব্দী জুড়ে বৃহত্তম জনসংখ্যার ভাষা ইংরেজিতে রচিত হয়েছে দুর্বোধ্য গল্প, উপন্যাস, কবিতা। বাংলাকে রবীন্দ্রনাথ গড়ে তুলছিলেন দ্রুতবেগে, এক দুর্গের মতো। বিশ শতকের সাহিত্যের ভাষা নিজেকে পোড়াতে নিজেকে ঘিরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। সে আগুনে ঢোকার সাহস যার নেই, সে এমন কী পাঠকও নয়। এই অগ্নিবেষ্টন থেকেই সালমা বাণীর মতো বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যের লেখকরা ভাষাকে এমন অস্ত্রবাণ করে তুলছেন। আগুন ছাড়া লোহা গলে না, হাতুড়ি ছাড়া লোহার আকার আসে না। এ অনুভব তো উদাহরণে প্রমাণ করা যায় না।

দুই.
ওয়ালিউল্লাহ, হাসান, ইলিয়াস-৫০ সাল থেকে ২০০০ পূর্ব পর্যন্ত পাক>বাংলাদেশের তিন প্রতিভূ কথাকারের গল্প-উপন্যাস আমি ঐতিহ্যের অন্তর্গত করে পড়ি। গল্প বা নভেল বলতে, পৃথিবীর যে কোনো ভাষাতেই গল্পের, গল্পের ঘটনার, মানুষজনের, নিসর্গের কেন্দ্রিকতা বোঝায়। এই কেন্দ্রিকতা তৈরি করতে এই তিনজনের কল্পনার মৌলিকতা ও আকার নির্মাণে তাঁদের যেন বংশানুক্রমিক এমন দক্ষতা অথচ বস্তুত যা স্বোপার্জিত, পাঠককে নতুন বিশ্বরূপ দেখায়, কোনো সময় রূপকার্থে, কোনো সময় পুরুষার্থে, কোনো সময় ব্যঙ্গার্থে। এরা তিনজন ও বাংলাদেশের আরো অনেক লেখক, এই গল্প-ঐতিহ্যের মধ্যে সক্রিয় আছেন অনেক কাল। কেউ যদি একে অখ- বাংলা উপন্যাসের ঐতিহ্যের অন্তর্গত মনে করেন, করতেই পারেন। কোনো কোনো ঔপন্যাসিক, একটি কোনো সময়ে, একসঙ্গে বা একা, ভেবে উঠতে পারেন, নভেল বা গল্প বলতেই এই কেন্দ্রিকতা তাঁকে বা তাঁদের আটকে ফেলেছে। এমন ভেবে ওঠা সব সময় সচেতন নয়। সচেতনতা প্রধানত, বা কেবলই, আকার নিয়ে ফর্ম নিয়ে। লেখার আকারটাই তাকে গড়তে হয়। আকারের বাইরে কোথাও সচেতনতা থাকে না, বিষয়ও থাকে না। এর অজস্র উদাহরণ আছেÑ বিশ্ববিজয়ী লেখককে কাঠগড়ায় দাঁড় করালে তিনি বলছেন, যা লিখছি বলে আমাকে জেলে পাঠানো হচ্ছে তা তো আমি লিখিইনি, উলটে আমি তো সেসব কথার সম্পূর্ণ বিরোধী ও আইনের একশ ভাগ সমর্থক, সচেতনতা তো উকিলদের কালো কোট নয়, যেটা না পরলে হাকিম কথা শুনবেন না। সামাজিক ও দার্শনিক সচেতনতা আর লেখকের সচেতনতা এক বস্তু নয়, লেখকের দায়বদ্ধতা সামাজিক নয়। তার দায় আকারের কাছে। ফর্মের কাছে। সেটা কাজ করে, কখনো, এমনকি, লেখকের অচেতনে, আকারের অদৃশ্য টানে। আমার খোজার ছিল বাংলাদেশের গল্পে কি এই কেন্দ্রিকতা প্রত্যাখ্যান, এই সামাজিক দায় অমান্য, সামাজিক সচেতনতা বর্জন শুরু হয়েছে কোনো একভাবে?

তিন.
যেমন সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘কাচ-ভাঙ্গা রাতের গল্প’র (১৯৯৮) অনেক গল্পেই গল্পের ঘটনার কার্য-কারণ বেশ স্পষ্ট, বিশেষ করে প্রথম দুটি খুব ভালো গল্পে, ‘অস্ত্র’ ও ‘লাশ’, ঘটনা যেমন এগোয়, যুক্তিও তেমনি গড়ে ওঠে। লেখক যে কতোটাই প্রস্তুত তাতে চমৎকৃত হয়ে আমাদের গল্পের শেষ থেকে ফিরে আসতে হয় গল্পের প্রথমে পনিরের প্রাইজের বইটিতে। বা পরের গল্পটিতে শহিদের বাবা ও মা লাশটিকে রাজু আর তোতার বা কারোই নয়Ñ এর মধ্যে গুলিয়ে দেয়, তখন আমাদের আতিপাঁতি খুঁজতে হয় কখন লেখক আলগোছে বলে রেখেছিলেন কে কে মিছিলে গিয়েছিল। অথচ এই বইটিতে ‘ফাগুর্সন ডিনারওয়ালার গল্পে’ ২৪টি ছোট ছোট টুকরোয় গল্পটিকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে গড়েন। তখন বরং ক্রমেই আমাদের অস্বস্তি হয় প্রথম লাইনটির দুর্বল ছুতোতে, যে গল্পটি স্বপ্নলব্ধ। মনজুরুল সচেতনতা থেকে স্বপ্ললব্ধ গল্পে যেমন হওয়া উচিত তেমনটিই হয়তো আলগা করে দিয়েছেন গল্পের গোটা বন্ধন, অথচ গল্পটির আকারের বেগ খড়কুটোর মতো ভেসে যায় সে সচেতন ঔচিত্যবোধ, সচেতনতার প্রয়োগ নিয়ম হয়ে ওঠে স্বপ্নহীন বাস্তবের আকার। নিরপরাধ পাঠকের কাছে এই পার্থক্যের কোনো মানে নেই হয়তো। সেই সুযোগে বিশিষ্ট পাঠকও মত দিয়ে বসেনÑ এসব বানানো জট পাকানো কথা- এই দরকারি শর্ত ভুলে গিয়ে যে জট পাকানোর ক্ষমতাই বিশেষজ্ঞতার আইডি। হ্যাঁ, গল্প পাঠক পেয়ে যেতেই পারেন কিন্তু সেটা লেখকের লেখা নয়। প্রথম দুটি গল্প আমাদের চেনা ঠেকতেও পারে। তৃতীয়টি নয়। তুলনার এই স্পষ্টতা আমারই পছন্দ নয়। অন্য কেউ এটা মানবেন কেন? অপছন্দ ও না-মানার এই আশঙ্কা সত্ত্বেও কথাটির আঁচ দেবো কী করে?
শহীদুল জহিরের একটি গল্প ‘আমাদের কুটিরশিল্পের ইতিহাস’ পাড়ার এক তরমুজওয়ালার গল্প। প্রায় ৫,০০০ শব্দের এই গল্পটিতে প্রায় ৩,০০০ শব্দের পর একটি মাত্র দাঁড়ি ও সে জায়গাটিতেই একটি মাত্র প্যারাগ্রাফ। এই কমা দিয়ে দিয়ে এতগুলি পাতা যাওয়া নিশ্চয়ই খেলামাত্র নয় কারণ প্রুফ দেখায় খুব ঝামেলা হয় এমন টানা লেখায়। তা ছাড়াও প্যারাগ্রাফের তো একটা আলঙ্কারিক মানে আছে। যুক্তির স্তরান্তর বা বিবরণের বর্ণান্তর বা সংলাপের পাত্রান্তর বা ঘটনার গত্যন্তর বা সময়ের পর্বান্তর বোঝাতে ও আরো কোনো ছেদের দরকারে। শহীদুলের যদি এমন একটা দরকারও না থাকে আর এই তিনি যদি তার অপ্রয়োজনীয়তা জানিয়েও রাখতে চান তা হলে তাঁকে দাঁড়িহীন প্যারাহীন লিখতেই হবে। আর নিরবচ্ছিন্নতাকে আমাদের গল্পের অংশ হিসাবে পড়তে হবে। তরমুজ নিয়ে ৫,০০০ শব্দ লিখতে হলো, জানাতে যে এটা তরমুজের গল্প নয়। শহীদুল জহিরের (বোধহয়) শেষ নভেল ‘মুখের দিকে দেখি’ নিয়ে অনেক কথা আছে এই লেখাটিতে সে কথায় ঢুকলে এই লেখার
প্রতিপাদ্য হবে না। শহীদুল মৌলিকতাকে পরীক্ষান্তর থেকে উতরে আনছেন বাংলাদেশের নিজস্ব গল্প খোঁজায়।
চার.
বাংলাদেশের গল্প খোঁজার সবচেয়ে বড় বাধা কলকাতা-নির্ভরতা। শুধু এই কারণেই এ কথাটা দাগিয়ে দাগিয়ে মোটা করে বলতে চাই পশ্চিমবাংলার ও বাংলাদেশের সাহিত্য কোনো অখ- সাহিত্য নয়। ভূগোল যখন এক ছিল, তখনো পূর্ববাংলার সাহিত্য, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কম গুরুত্ব পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুঁথিসংগ্রহ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের উপাদান হয়ে ওঠেনি। ভূগোল এক থেকেও ইতিহাস যখন আলাদা হয়ে গেল তখন দুই দেশের মধ্যে কোনো সাহিত্য সম্পর্ক ছিল না। ১৯৫০ থেকে পূর্ববাংলায় ভাষা-আন্দোলন শুরু। কেউ কেউ বলেন বা বলতে ভালোবাসেন, ধর্মীয় জাতীয়তা বদলে গেল ভাষা-জাতীয়তায়। অতো চটজলদি জাতীয়তা বোধহয় বদলায় না। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজি ও/বা উর্দু জানা জনসংখ্যা নতুন রাষ্ট্রের প্রয়োজনের আনুপাতিক ছিল না। বাংলার দাবি ছিল রুটি-রুজির বাস্তব ভিত তৈরিরও আন্দোলন পূর্ব পাকের ভাষা-আন্দোলনের স্বাভাবিক, ঐতিহাসিক ও নিকটতম শরিক পশ্চিমবাংলা তখন ভারতের একটি রাজ্য হিসেবে সমতুল্য কোনো সংকটে পড়েনি ভাষা নিয়ে। তার একটি কারণÑ পশ্চিমবাংলার নেতারা, কর্তারা, কর্তৃত্বক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলি যেমন সরকার, পার্টি, বিধানসভা, আদালত, বিশ্ববিদ্যালয় এই বিষয়ে নীরব এই মতৈক্যে নিশ্চিত ও স্থির ছিল যে ইংরেজিই থাকছে। তাছাড়াও এতোবড় একটা রাষ্ট্রের এতোগুলি রাজ্যের অসংখ্য সব স্তরে নিয়মিত ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পক্ষে সম্ভব ছিল না কোনো ভাষাকে কোণঠাসা করা। স্বাধীনতার পর, দাক্ষিণাত্য ছাড়া, ভারতের কোথাও ভাষা নিয়ে আন্দোলন হয়নি। এক আসাম ও বিহারের সংখ্যালঘু বাংলাভাষী অঞ্চলে আঞ্চলিক সংখ্যাগুরুত্বের মর্যাদার সমাবেশ ঘটেছে। তাছাড়াও ভাষাভিত্তিক রাজ্য স্বীকৃত জাতীয় নীতি। বড় ভাষার দাপট হিন্দি দেখিয়েছিল কিছুদিন। ফলে উর্দুর খুব ক্ষতি হয়েছে। আবার হিন্দিবলয়ের ছোট ভাষাগুলি হিন্দির সঙ্গে মিশতেও চেয়েছে।
পশ্চিম ও পূর্ব বাংলায় রাষ্ট্র ও সমাজে বাংলার বিকাশ ঘটেছে সম্পূর্ণ পৃথক কার্যকারণে। বিকাশের অঙ্গাঙ্গী সাহিত্য কী করে তা হলে একই থাকবে? গল্প যে অব্যবহিতের ঘাতে প্রতিঘাতে স্রোতস্বী, প্রখর ও ঢেউলাঞ্ছিত হয়ে ওঠেÑ সেই অব্যবহিতের মধ্যেই যদি এতো ব্যবধান, তা হলে মিলটা থাকে কোথায়?

পাঁচ.
যা বাংলাদেশেই সম্ভব, বাংলাদেশ ছাড়া যা পৃথিবীর আর কোথাও অঘটন, বাংলাদেশের অসংখ্য বুলি ছাড়া যা উচ্চারিত হতে পারে না, বাংলাদেশের পোশাক ছাড়া যে অঙ্গভঙ্গি শরীরে খোদাই হয় না, বিল-হাওর-খাল যে চলাচলের পথÑ সেই নিজস্বতা এখন বাংলাদেশের গল্পে খোঁজা চলছে। সেই খোঁজাখুঁজি কিন্তু ব্যস্ত নয় বর্তমানের কোনো লাইনটানা বাস্তব বুঝতে। বাংলাদেশের গল্প সেই নিজস্বতার খোঁজে চাইছে তার নিজের ঐতিহ্য তৈরি করতেÑ যা অদ্বিতীয় ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলাদা ও অখ- বাংলা থেকে স্বতন্ত্র।
জাকির তালুকদার একটি নভেল লিখেছেন, ‘কুরসিনামা’, ১৭-১৮ শতকের শুকুর মাহমুদ রচিত পুঁথি গোপীচন্দ্রের সন্ন্যাস তার উপাখ্যান। এ পুঁথিটি আমি পড়িনি কিন্তু গোপীচন্দ্র তো জানিÑ থৈ থৈ করছে আধুনিক এপিকের গল্পে। জাকির কতোটা সফল সেটা বিবেচ্য নয়Ñ বিবেচ্য তাঁর আবিষ্কার। লেখককে তার নিজের ঐতিহ্য নিজেকে বানাতে হয়Ñ এই এলিয়টি মহাসূত্র যেমন সত্য, তেমনি সত্য সাহিত্যের নতুন রূপের, এক্ষেত্রে নভেলের, প্রত্নপ্রতিমান খুঁড়ে বের করার পেশল সামবায়িক মেহনত। সেই প্রত্নপ্রতিমান বাংলাদেশের লেখকদের জন্য কলকাতায় সাজানো নেই।
সাদ কামালীর একটা গল্প পড়ে এই নতুন গল্পের চাতুর্য বোঝা যায়। ‘জিয়াফত’ গল্পটির নাম। বাংলাদেশ বলতে যে ছবিটি বেশ চেনা, সেই ক্ষেত, চাষবাস, আলপথ, জোলা ইমামবাড়িÑ এসবই ঠিকঠাক চলছে ততোদূর মাত্র, যতোদূর লেখক চান। এই দূরত্ব নিয়ন্ত্রণ করছেন এই সন্দেহটা আসে গল্পের শুরু থেকেইÑ একজনের ভেধবমি শুরু হয়েছে। তারপর চললÑ পায়খানার বিবরণ। মেয়েটি মরেও যায়। মৃতদেহের সঙ্গে বাকি ক্ষুধার্তদের নিশিযাপনের বর্ণনায় লেখক একটু উসকেও দেন পাঠককে হাততালি দিতে। তারপর লেখক এই তথ্যাক্রান্তি বাস্তববাদকে অবাস্তবে নিয়ে যান এমনি সরলগতিতে যে এতোক্ষণের বাস্তবমোহিত পাঠক ভেবে নিতে পারেন যে সত্যি সত্যি জয়তন মৃত ফাতুর শরীর থেকে মাংস কেটে কেটে গোশতের খিচুড়ি রাঁধে। সাদ কামালী যদি এটা এমন লিখবেন না ভেবে লিখে থাকেন ও আমার বলা গল্পটি যদি তাঁর কাছেও নতুন ঠেকে তা হলে বাংলাদেশের গল্পের ঘাড় থেকে সচেতনতার ভূত নড়ছে। সাদ কামালীর অনেকগুলি গল্প হাতের কাছেই আছে। সে গল্পগুলির পাঠোদ্ধারের লোভ ঠেকিয়ে রাখছি।
মনিরা কায়েস-এর ছটি গল্প নিয়ে তাঁর বই, ‘জলডাঙ্গার বায়োস্কোপ’ বেরিয়েছে ২০০১-এ। ইনি যে তাঁর গল্পগুলিকে আলাদা কোনো চিহ্ন দিতে চান না তাঁর নামকরণগুলিতেই স্পষ্টÑ বায়োস্কোপ, কথকতা, বৃত্তান্ত, কাহিনী, ঠিকুজি, বাস্তুপাঠ। কেন একজন লেখক তাঁর গল্পগুলিকে এতো চিহ্নিত করতে চান ও তার গল্পবলার, ন্যারেটিভের, চেনা-অচেনা নানা নামে, আর কেনই বা একটু ঠিকুটি ও আরেকটা কথকতা, সেটা আমাদের বুঝতে হবে গল্পগুলি থেকেই। এই নতুন লেখালেখির নতুনত্ব এখানে যে গল্পের নাম থেকেই গল্প শুরু হয়ে যায়। নাম গল্প নিয়ে লেখকের মন্তব্যমাত্র নয় বা কোনো একটি ঘটনাকে আলাদা প্রাধান্য দেয়া নয়। এটাও লক্ষণীয় যে বেশির ভাগ সময়ই নামগুলো গল্পের আকার বা স্বরের সংকেত। কী নিয়ে লেখা এই গল্পগুলি? পৃথিবীর কোনো গল্পই কোনো কিছু নিয়ে লেখা হয় না। বাংলাদেশের গল্প আরো হয় না বা হবে না। সেটার কারণ মনিরার ‘গরঠিকুজি’ থেকে সাজিয়ে দেয়া যেতে পারে। ১ জামানের শ্বশুর সাহু। (২ জামানের ছেলের খন্নত। ৩। শফিক যাচ্ছে নেমন্তন্নে। ৪। হাজামের সরিওয়তি। ৫ লোকনাথপুরের পুরনো গল্প। ৬ নতুন ধানবীজ। ৭। পুতুলরাণী। ৮। দুধমা। আরো ভাগ করা যায়। এর ভিতর থেকে একটা কী দুটি গল্প জোড়া লাগিয়েও কি একটা কোনো নির্ভেজাল গল্প তৈরি করা যেতো না। কী করে যাবে? কী করে যাবে যদি জামানের শ্বশুর সাহু না হয়, তা হলে জামালের ছেলের খন্নতে ধুমধাম হয় না, না হলে শফিককেও যেতে হতো না, যদি জামাল এসে বাইকে নিয়ে যায়, গেলে রঘুনাথপুরের সাবেক ভিটে না দেখে আসা যায় না, দেখে এলে বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার পুতুলরাণীকে না দেখে ফেরা যায় না। জামালের বাইক তবে কেন? সাহু তবে কেন? ছেলের খন্নতে বাপ ও বাপের বন্ধুরও লিঙ্গ ভোগ যদি না ঘটে? বাংলাদেশের হিন্দু যদি মাটির টানেই বাংলাদেশের থেকে যায় তবে কী কী বেষ্টনী তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে? ঢাকার জমি-বাড়ির দাম যে হারে বাড়ে আর বাড়িভাড়াও যেমন জড়িয়ে যায় মুসলিম গোঁড়ামির রাজনীতির সঙ্গে তাতে বন্ধুত্বের ধারণা বদলে যায় শিকড়শুদ্ধ (এই বইটির ‘মরা কার্তিকের কথকতাÑ’।

ছয়.
বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও মানুষজনের জীবন-জীবিকার বিচিত্রতার মধ্যে এমন একটা স্বাভাবিক আখ্যান ছড়ানো আছে যা গল্পকারকে টানে। সহজেই চলে আসে অচেনা। সে অচেনা আরো রহস্যে ভরে ওঠে মানুষের কথাবলার রঙিন পার্থক্যে। তাতে বিপদের ফাঁদও থাকে পায়ে পায়ে। গল্প চলে যায় রূপকে।
যাঁদের লেখার কথা বলছি, তাঁদের লেখায় এই ভূপ্রকৃতি এখন বিপরীত অর্থ কেমন তৈরি করছে, সাদ কামালীর একটি গল্পে একটু আগে সেটা দেখেছি। বিপরীত আর একা অর্থ আসছে জীবিকার খোঁজে বাংলাদেশের মানুষজনের প্রবাসী হয়ে ওঠায়। সাদ কামালীর আর একটি গল্প ‘হলুদ হলুদ জীবন’। আমেরিকায় গিয়ে ট্যাক্সি চালাচ্ছেÑ কোনো স্থায়ী চাকরির অপেক্ষায় তেমন যে করতে হয় তা জানা ছিল। জানা ছিল না আমেরিকার জীবনও তার জীবনের ভিতর ঢুকে যেতে পারে অনিবার্য। পাঁচজন রুমমেটের সঙ্গে তাকে দিন কাটাতে হয়। যে যৌনতা আকাক্সিক্ষত নয় অথচ যে যৌনতা ছাড়া জীবন অচল তাতে শরীর ভাসিয়ে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। অথচ সে প্রবাসেও তার স্বদেশ তাকে আবিষ্ট করে রাখে, কোনো মানস-কাতরতায় নয়, জীবিকায় সে বাংলাদেশি বলে।
মামুন হুসাইন শব্দ, বাক্য, উপমা, সংলাপ এগুলো নিয়ে সাবধানী। সেই সাবধনতার কারণে তাঁকে আমাদের চেনা ক্যাসিকাল মনে হতে পারে। তার ‘গন্ধহীন পচা সংবাদ’-এ বিদেশ আছে। পচা মিয়া একটি লোক। এ গল্পতে তাকে নিয়েই মামুন কথা বুনেছেনÑ কখনো পচারই মনে যেসব কথা উঠছে ডুবছে, কখনো অন্য কারো বলা কথার স্মৃতিতে, কখনো লেখকের যেসব কথা মনে আসছে। এতো রকমের কথা পচাকে ঘিরে উঠছে যে তার নাম পচা না হলে আমাদের পড়ার অভ্যাসে একটু কম লাগতো। পচার সমস্যা হচ্ছে ধীরে ধীরে সে কোনো গন্ধ নেয়ার, স্বাদ নেয়ার, ছোঁয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। তারপর অবিশ্যি পচা মিয়া শারীরিক অর্থেই অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে থাকে।
শামীম রেজার একটি উপন্যাসের নামÑ মায়াকোভস্কি-জীবনানন্দ মিলিয়ে। শামীম কবিতাও লেখেন। তাই সন্দেহ হয়েছিল তিনি হয়তো উপন্যাসে কবিতার সুযোগ নিচ্ছেন। লেখাটি আমাকে পড়তে হয়েছিল ক্রমশ প্রকাশের পিছু পিছু। মাঝামাঝি এসে শামীম যে বাঁক নিলেন তাতে বাংলাদেশের মেঘনা-পদ্মার মতো নদীবিস্তার যেন উপন্যাসটিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। এই যে মায়াকোভস্কি-জীবনানন্দের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকৃতগাথা হয়ে যাচ্ছে এক এপিক কল্পনার সাযুজ্যে, সেখানেই আমি পড়ছি বাংলাদেশের এখনকার কিছু গল্পের এপিকতা।
অদিতি ফাল্গুনীর ‘চিহ্নিত বারুদ বিনিময়’ গল্পের বইটি আমার হাতে আসে এই সফরে- জানুয়ারির শেষদিকে। এখানকার নির্ধারিত অনুষ্ঠানগুলির ব্যস্ততায় তার লেখাগুলি খুব নিবিষ্ট পড়তে পারিনি। তবু যা পড়েছি তাতে উল্লিখিত লেখকদের যে চেষ্টা আমি অনুমান করছিÑ বাস্তবতার বিপর্যয়ে এক উল্টো বাস্তব তৈরি করাÑ তিনিও সেই চেষ্টায়ই ব্যস্তÑ বোধহয় একটু বেশি স্বনিয়ন্ত্রিত ভঙ্গিতে। এই চেষ্টার একটা সহজ জোরের জায়গাÑ অদিতির ভাষানির্ভর বৈচিত্র্যের সাহস-চর্যাপদ থেকে হিব্রু-ব্যাকরণ পর্যন্ত তিনি ব্যবহার করেন। অদিতির গল্পগুলি তার নিজের গল্পই হয়ে উঠেছেÑ এমনকি এসব তথ্যওÑ কবে লেখা, কবে ছাপা, কবে দ্বিতীয়বার ছাপা, কবে কার কাছ থেকে কোন তত্ত্ব বা খবর জেনেছেন। কিন্তু এই ব্যক্তিগত তথ্য পাঠককে কী জানাতে চাইছে, আমি ঠিক ধরতে পারিনিÑ বরং অসুবিধেই হয়েছে দু-এক জায়গায়। কিন্তু এমনও হতে পারে অদিতি গল্পটির শেষে এসে যেন একটা সিল দিতে চাইছেনÑ এটা গল্পই হবে সব গল্পেই তো একটু সত্য থাকে।

বাংলাদেশের গল্প-উপন্যাসে ব্যবহৃত কতকগুলি লক্ষণ এখন প্রথা হয়ে উঠেছে কী না এমন ভয় আবার মনে এসেছেÑ আহমাদ মোস্তফা কামাল ও মাহবুব মোর্শেদের কিছু গল্প পড়ে। জানতে পেরেছি এঁরা বেশ নামকরা লেখক। মাহবুব মোর্শেদের ‘অন্য এক গল্পকারের গল্পের প্রতিলিপি’ গল্পটির গড়নটা নিটোল এবং তিনি প্যারাগ্রাফ ভাগ করেই শুধু সংকেত দিয়েছেনÑ এটা দুটো গল্প। ১১ লাইনের একটা প্যারা শুরু করে তিনি সাড়ে পাঁচ পাতার একটা দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফ লিখে, ৬ লাইনের তৃতীয় প্যারার পর তিনি দুটি গল্পকে মিলিয়ে দিতে ২০ লাইনের একটি প্যারা লিখে শেষ করে দেন। এই শেষ প্যারাটি প্রসিদ্ধ সব পদের বা ঘটনায় আলগা উল্লেখে গল্পের প্রথম লাইনে ফিরে আসে। এমন একটা অব্যবহিত আকার নিশ্চয়ই চমকপ্রদ। কিন্তু চমক কেটে যায় একটা বেশ অনব্যবহিত প্রশ্নেÑ এতে গল্পটায় একটা এমন সিদ্ধান্তে ঢুকে যাচ্ছে না যে আসলে কিছুই বদলায়নি।



প্রকাশ করা হয়েছে: অন্যের লেখা বিভাগে ।



* ২০ টি মন্তব্য
* ৪৫২ বার পঠিত,

Send to your friend Print
রেটিং দিতে লগ ইন করুন
পোস্টটি ৬ জনের ভাল লেগেছে, ৬ জনের ভাল লাগেনি


এই লেখার লিংক টি আপনার বন্ধুকে পাঠান বন্ধ করুন





এই লেখার লিংক টি আপনার বন্ধুকে পাঠান বন্ধ করুন

আপনার নিজস্ব ই-মেইল ক্লায়েন্ট ব্যবহার করতে চাইলে এখানেক্লিক করুন

আপনার নাম :

আপনার ই-মেইল

আপনার বন্ধুদের ইমেইল

মেসেজ (নীচের মেসেজটি আপনার ইচ্ছেমত পরিবর্তন করুন
hi, i have been reading a nice wonderful post in http://www.somewhereinblog.net and would like to share it with you. Here is the post link http://www.somewhereinblog.net/blog/mahbubmoreblog/28768893 , please visit the link and rate it if you like. :-)

নিজেকেও একটি কপি পাঠান



১. ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৩
comment by: মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন: শেষ প্যারা থেকে আবার :

বাংলাদেশের গল্প-উপন্যাসে ব্যবহৃত কতকগুলি লক্ষণ এখন প্রথা হয়ে উঠেছে কী না এমন ভয় আবার মনে এসেছেÑ আহমাদ মোস্তফা কামাল ও মাহবুব মোর্শেদের কিছু গল্প পড়ে। জানতে পেরেছি এঁরা বেশ নামকরা লেখক। মাহবুব মোর্শেদের ‘অন্য এক গল্পকারের গল্পের প্রতিলিপি’ গল্পটির গড়নটা নিটোল এবং তিনি প্যারাগ্রাফ ভাগ করেই শুধু সংকেত দিয়েছেনÑ এটা দুটো গল্প। ১১ লাইনের একটা প্যারা শুরু করে তিনি সাড়ে পাঁচ পাতার একটা দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফ লিখে, ৬ লাইনের তৃতীয় প্যারার পর তিনি দুটি গল্পকে মিলিয়ে দিতে ২০ লাইনের একটি প্যারা লিখে শেষ করে দেন। এই শেষ প্যারাটি প্রসিদ্ধ সব পদের বা ঘটনায় আলগা উল্লেখে গল্পের প্রথম লাইনে ফিরে আসে। এমন একটা অব্যবহিত আকার নিশ্চয়ই চমকপ্রদ। কিন্তু চমক কেটে যায় একটা বেশ অনব্যবহিত প্রশ্নেÑ এতে গল্পটায় একটা এমন সিদ্ধান্তে ঢুকে যাচ্ছে না যে আসলে কিছুই বদলায়নি। বদলায়নি যদি তাহলে এখনকার গল্পকার গল্প লিখছেন কেন?
আহমাদ মোস্তফা কামাল প্রতিষ্ঠিত গল্পকার। তার দুটি গল্প ‘আমাদের শহরে একজন অচেনা লোক’। আমাদের শহরে একজন অচেনা লোকÑ বেশ সাদাসিধে সরলতার ভানে লেখা। সেই সাধারণতা তাঁর কাহিনীকে ধীরে ধীরে ঘোরালো করে তোলে। তবু আমার মনে হয় এই ধরনের সচেতন আকারে এমন প্রসঙ্গ বাদ দিলে ঘোরালোটায় আর কোনো ফাক থাকে নাÑ যেসব কথা ইতোমধ্যে খবর হিসেবে আমাদের জানা। মোস্তফা কামালের গল্পটা একটাই গল্প হতে ক্ষতি কী ছিল। দুই অধ্যায়ের মতো। ক্ষতি তাতে একটাই হতো ও বড় ক্ষতি। গল্প বা ছোটগল্প যে আখ্যানের ফ্রেম ভাঙতে পারে সেটা প্রমাণিত হতো না। সেটা প্রমাণের দরকার কী ছিল? দরকার ছিল এই পরিসরটুকু তৈরি করা যে একটা গল্প দুটোও হতে পারে।
আখ্যানের আকারের এই নানা রকমটা বাংলাদেশের গল্পে এখনো তেমন চর্চিত নয়। ছোটগল্প, বড়গল্প, নভেলেট, নভেল এই ছাঁচগুলো তাই লেখকের করার কিছু কর্তব্য চাপিয়ে যাচ্ছে।
কেউ কেউ যে ছাড় দিতে চান সেটা মনে হলো মঈনুল আহসান সাবেরের অবসাদ ও আড়মোড়ার গল্প দেখে। বইটি এতোটাই দেরিতে হাতে এল যে ভালো করে পড়াই গেল না। তবু, লেখক যে কতকগুলি অধ্যায়-সংখ্যা দু-তিন জায়গায় ব্যবহার করছেন সেটা লক্ষ্যে পড়েছে। তিনি হয়তো এমন একই সংখ্যায় চিহ্নিত অধ্যায় লিখে ধারাবাহিকতা ভাঙতে চান।
২. ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:৫১
comment by: মনিটর বলেছেন: কমেন্ট মুছলেন কেন?



বাংলাদেশের গল্প-উপন্যাসে ব্যবহৃত কতকগুলি লক্ষণ এখন প্রথা হয়ে উঠেছে কী না এমন ভয় আবার মনে এসেছেÑ আহমাদ মোস্তফা কামাল ও মাহবুব মোর্শেদের কিছু গল্প পড়ে। জানতে পেরেছি এঁরা বেশ নামকরা লেখক। মাহবুব মোর্শেদের ‘অন্য এক গল্পকারের গল্পের প্রতিলিপি’ গল্পটির গড়নটা নিটোল এবং তিনি প্যারাগ্রাফ ভাগ করেই শুধু সংকেত দিয়েছেনÑ এটা দুটো গল্প। ১১ লাইনের একটা প্যারা শুরু করে তিনি সাড়ে পাঁচ পাতার একটা দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফ লিখে, ৬ লাইনের তৃতীয় প্যারার পর তিনি দুটি গল্পকে মিলিয়ে দিতে ২০ লাইনের একটি প্যারা লিখে শেষ করে দেন। এই শেষ প্যারাটি প্রসিদ্ধ সব পদের বা ঘটনায় আলগা উল্লেখে গল্পের প্রথম লাইনে ফিরে আসে। এমন একটা অব্যবহিত আকার নিশ্চয়ই চমকপ্রদ। কিন্তু চমক কেটে যায় একটা বেশ অনব্যবহিত প্রশ্নেÑ এতে গল্পটায় একটা এমন সিদ্ধান্তে ঢুকে যাচ্ছে না যে আসলে কিছুই বদলায়নি।

:)
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:০৫

লেখক বলেছেন: আপনার নামটা দেখি নাই। ভাবছিলাম আমিই ভুলে পেস্ট করে দিয়েছি।
৩. ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৮
comment by: মজনু পাটোয়ারী বলেছেন: কিছু মনে করবেন না। আমার কাছে কেন যেন এটা আত্মপ্রচার মনে হচ্ছে। ভুলও হতে পারে।
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:০৯

লেখক বলেছেন: আপনার কাছে আত্মপ্রচার মনে হইলে এখন আমার কী করা উচিত?
লেখাটা আমি লেখি নাই। দেবেশ বাবু লেখছেন।এই লেখা নিয়া একটা সেমিনারও হইছে। এইটা ৭ তারিখে যায়যায়দিনে ৮ তারিখে সমকালে ছাপা হইছে। এখন আপনে আত্মপ্রচার মনে করলে আমি কী করবো, পাটোয়ারি? এইখানে কতজনের কথা আছে খিয়াল কইরেন। আমার নামটা মুছে দিয়া লেখা পোস্ট করতে বলেন এখন? কী পরামর্শ আপনার?
৪. ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:০২
comment by: মনিটর বলেছেন: মজনু পাটোয়ারী/ ভুল বলছেন।
কিসের আত্মপ্রচার?কোন লাইনটা আত্নপ্রচার?
৫. ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:১০
comment by: মিসকল মফিজ বলেছেন: রাজাকার বিরোধিতার জন্য যারা যারা ব্যান খাইলেন তাদের তালিকা-

১. নির্ভৃত পথচারী
২. মাহমুদ মামূন
৩. পঞ্চভূজ
৪. বিগব্যাং
৫. মাথামোটা
৬. সংস্থাপ
৭. মিসকল মফিজ (আমিও শেষ পর্যন্ত খাইলাম ১ম পাতা থন)
১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:১৪

লেখক বলেছেন: ঘটনা কী?
দুই দিন অফলাইনে আছিলাম। কিছুই জানি না।
৬. ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:২৭
comment by: দূরন্ত বলেছেন: বাপরে বাপ।
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১:০০

লেখক বলেছেন: কী?
৭. ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:১৬
comment by: তারিক টুকু বলেছেন: মাহবুব ভাই, আদাব নেবেন।

এই সেমিনারটায় আমি, আপনি ছাড়া আরো অনেকে ছিলেন।
উনারা আমাদের কাকে নিয়ে কী বললেন, না বললেন এসব যত তাড়াতাড়ি পারা যায় ভুলে যাওয়া উচিৎ বোধহয়। পাঠককেও দেখানো দরকার নেই আমাদের নিয়ে কে কী লিখলো। কেননা, আমরাই জানি আমরা কতটা আগালাম।

আমি এটা আপনার প্রতি ভালবাসা থেকেই বল্লাম। আশাকরি ভুল বুঝবেন না।
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১:০৩

লেখক বলেছেন: টুকু কথাটা ঠিক।
৮. ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৮:৪৯
comment by: মাঠশালা বলেছেন: মাহবুব ভাই প্রথমেই ধন্যবাদ যানাতে চাই পুরো লেখাটি ব্লগে দেয়ার জন্য। কষ্ট করেই পাঠোদ্ধার নিতে হলো লেখাটির। ওই সেমিনারে আমি উপস্থিত ছিলাম। দেবেশ রায় এখানে যে কথাগুলো বলেছেন তা কিন্তু আমি সেমিনারে পাইনি।

এখানে দেখলাম তিনি আপনিসহ বেশ কয়েকজন কথাসাহিত্যিকের কাজের প্রবণতা চিহ্নিত করার প্রয়াশ পেয়েছেন তাও খুব সল্প পরিসরে। আর তাঁর এই তুল্যমুল্য বিচার নিরুপিত হয়েছে (কয়েকজন ছাড়া) একটা করে লেখা পড়ে। যা কোনভাবেই দেবেশ রায়ের কাছ থেকে আসা করি না। তাও ভালো এখানে তিনি শুধু নামের তালিকা দেননি। ভালো বলছি এ কারণে যে, অগ্রজরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তরুনদের লেখার তুল্যমুল্য করতে গিয়ে- লেখকের লেখার সাথে সংযোগ করার চাইতে নাম আর কিছু চটকদার প্রবণতার উল্লেখমাত্র করেই খালাস নিয়ে নেন। যেনো কোন দায়-দায়িত্ব নেই। এখানে দেবেশবাবু অন্তত প্রবণতা চিহ্নিত করার সাথে সাথে তার সাপেক্ষে আরো কিছু বলতে চেয়েছেন। তবে তাঁর সেই বলাকেই তিনি নিজে টলটলায়মান করে দিয়েছেন যখন তিনি স্বীকার করে শুরু করেন যে, এখানকার নতুন লেখা এবং লিখিয়ে উভয় সম্পর্কেই তার আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ততটা পাঠ তিনি নিতে পারেন নি। তাঁর আগ্রহ নিয়ে আমার কোন অশ্রদ্ধা নেই। বরং তিনি যেহেতু বাংলা ভাষারই লেখক পাঠক তাই বাংলাদেশে তৈরি হওয়া লেখা ও লেখক সম্পর্কে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই এ ভাষার লেখক পাঠকের মত তাঁরও আগ্রহ থাকবেই।

তারপরও বলতে চাই সেমিনারে যদি এই লেখাটিও উপস্থিতদের মধ্যে দিয়ে দেয়া যেতো তাহলেও সেমিনারটিতে কথা বলার নির্দিষ্ট ক্ষেত্র তৈরি হত।

এখন দেবেশ রায়কে সামনে রেখে নিজেদের বই সমপর্কে দুয়েকটি কথা বলার সুযোগ তৈরী করার যে চেষ্টা করা হলো তা আমাদের কাছে নতুন নয়। একবার দেবেশ রায়, একবার জয় এইতো হয়। আমার্ব্লগে করা আপনার মন্তব্যটিই আবার বলতে চাই- আয়োজনের মুল জায়গাতেই আমার সমস্যা এবং বিরোধীতা। হয়ত এই বিরোধীতার কথা বলতে গিয়ে বার বার দেবেশ বাবু চলে আসলেন। তাঁর প্রতি বিনম্র শদ্ধা রেখে বলি- "এভাবে আসবেন না"। একটু খোঁজ খবর নিয়ে না আসলে যে কারণে ভালোবাসা তৈরী হয় সেটাই আড়াল হয়ে পড়ে।
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১:১১

লেখক বলেছেন: গত দশ বছরে বাংলাদেশের কোনো দৈনিক, লিটল ম্যাগাজিনে আমি দেবেশ রায়ের ওপর কোনো লেখা পাই নি। অথচ দেবেশ রায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একাধিক লেখকের ওপর লিখেছেন, এটা বিস্ময়কর। এবার তিনি বাংলাদেশের তরুণদের ওপর লেখার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা আরও বিস্সয়কর। এই লেখা নিয়ে তার সঙ্গে প্রচুর বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু সবকিছুর আগে আপনার কথাটাই মনে পড়ে। গ্রেস মার্ক দিয়ে দেবেশ রায়কে ছাড় দিতে আমিও রাজি নই। দেবেশ রায় দেবেশ রায়ই। তার কাছ থেকে কোনো কমতি আমরা আশা করি না।
৯. ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১০:৫৫
comment by: তারিক টুকু বলেছেন: মাহবুব ভাই,

মাঠশালার পোস্টটাকে আমি আমার কথাগুলোর সাথে যোগ করতে চাই।

এবং

আমার মনে হয়, পশ্চিমবঙ্গের লেখকেরা এখানে এসে নানান মন্তব্য করেন বিভিন্ন প্রলোভনে পড়ে। সেটা প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষ যাই হোক না কেন। এরা এসে তাদের বাড়িতে ওঠেন, যাদেরকে আমরা বিভিন্ন পুরষ্কার কিনে আনতে দেখি, বিভিন্ন লাইন-ঘাট করে এখানে সেখানে "জাতে" উঠতে দেখি।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, পশ্চিমবঙ্গের লেখকেরা কেন এভাবে এদেশে এসে এদেশের সব আস্তাকেড়ের লেখকদের বেছে নেন। মনে আছে, কোন এক লেখায় আপনি লিখেছিলেন, "সুনীল গাঙ্গুলীরা এদেশে এসে গোসল মেরে যান"। তো এদের আসাটা সেই "গোসল মেরে " যাওয়ার মতোই আরকি!

আর দেবেশ রায়ের প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তিনি যেভাবে উপন্যাসকে ভাবেন, সারা পৃথিবীতে সেই ভাবনার অস্ত অনেক আগেই ঘটে গেছে। উনি যেটা বলে গেলেন : "১১ লাইনের একটা প্যারা শুরু করে তিনি সাড়ে পাঁচ পাতার একটা দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফ লিখে, ৬ লাইনের তৃতীয় প্যারার পর তিনি দুটি গল্পকে মিলিয়ে দিতে ২০ লাইনের একটি প্যারা লিখে শেষ করে দেন। এই শেষ প্যারাটি প্রসিদ্ধ সব পদের বা ঘটনায় আলগা উল্লেখে গল্পের প্রথম লাইনে ফিরে আসে। এমন একটা অব্যবহিত আকার নিশ্চয়ই চমকপ্রদ।"- এভাবে, আমার মনে হয় এখন শুধু পৃথিবীতে বড় বড় লেখকদের মধ্যে দেবেশ রায়ই ভাবেন!

যাক এ বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার বিষয়। মোদ্দা কথা হলো উনি (পড়েই) অনেকগুলো নাম নিয়েছেন,কিন্তু আমার কোথায় যেন মনে হয়েছে উনি টোটালিটি কে ধরতে গিয়ে প্রবণতা ধরার/ স্ট্রাকচার ধরার ফাঁদে পড়েছেন বা পুরো বিষয়টিকে তার মনোযোগের বাইরে রেখে দিয়ে কিছু অর্ডিনারি কথা বলে গেছেন।

একারণেই আমি আগের পোস্টটিতে লিখেছিলাম, আমরা কী করেছি সেটা আমরা ভালো জানি।


১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১:১৬

লেখক বলেছেন: আমাদের কাজ বিষয়ে আমরা ভাল জানি বটে। কিন্তু সেটা জেনে শান্তিতে থাকার মধ্যেও এক ধরনের আত্মপরতা আছে। তার মানে এই না যে, কারো সার্টিফিকেটের জন্য আমাদের মুখিয়ে থাকতে হবে। ব্যাপারগুলো একটা একটা স্বাভাবিকতার মধ্যে চর্চিত হলেই ভাল হতো।
১০. ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১২:৪৯
comment by: মুয়ীয মাহফুজ বলেছেন: দেবেশ রায় দেখলাম পুরো আলোচনায়ই বিবৃত করেছেন কিভাবে তিনি এপার বাংলার সাহিত্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তা।তিনি যে শক্তিমান লেখক তা আরেকবার দেখতে পেলাম যখন তিনি চিনহিত করেন এর কারঙুল ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে,সংখেপে।তিনি অনেকবারি বলেছেন যে তার এ আলোচনা অনেক্তা সীমিতপাঠ।তারপরো কিছু ঘটনা নাকি ঘটেছে যা অনভিপ্রেত ও এ আয়োজন কে একটা প্রশ্নের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেয়।
তার আলোচিত কয়েক জন বাদে বাকি সকলের নাম বেশ পরিচিত আমাদের এখানে।শহিদুল জহির প্রসংগে তার আলচনাটি আরেক টু বিশদ হতে পারত,যা হয়েছে অদিতি ফাল্গুনি,সাদ কামালি,মাহবুব মোর্শেদ,সালমা বীনার আলচনায়।

তার আলচনায় প্যারাগ্রাফ,যতিচিন্ন,লাইন এ-সব বিসয় বেশ আধিক্য দেখলাম।যদিও তা আসলে তারাই সৃস্টি করেছে।কমলকুমার মজুমদার নিজেই এ বিসয়ে অনেক ভাংচুর করেছেন,সে প্রসংগে এসে তার মনভাব বুঝা যায়নি।আমি আসলে তার এই প্রসংগে ব্যকরনিক আলচনা পাই যা আসলে গল্পের মাঝে উল্লেখযোগ্য কন অবদান রাখেনা কখনই।
আরো কিছু লেখকের নাম অবশ্যি তার আলচনা দাবী করে,যেমন-সজীব নজরুল,কাজল শাহনেওয়াজ প্রভৃতি।

তবে এ সেমিনারে যদি তার এ বক্তব্য সবাইকে না দেয়া হয়,তবে আয়জন অনেকটা কস্টসাধ্য হয়ে ওঠার কথা দর্শকের জন্য।

এরকম আয়োজন এরপরে আমরা সকলেই কিছু ভালো আয়োজকদের দিয়ে হোক-তা চাই।
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১:২১

লেখক বলেছেন: অনেক লেখকের বই তার কাছে পৌঁছায়নি। আবার অনেকের বই তিনি ওল্টাননি একথাও ঠিক। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের তরুণ লেখকদের নিয়ে একটা বই লিখবেন। সেটা করলে নিশ্চয়ই তিনি ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাববেন।
আয়োজকরা প্রবন্ধটি সেমিনারে উপস্থিতদের হাতে না দিয়ে ম্যাসাকার ঘটিয়ে দিয়েছেন। তারা কেন এই রাখঢাক করলেন সেটা এখনও রহস্য হয়েই থাকলো।
১১. ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ১২:৩৮
comment by: মামড়া- দ্যা এভার লিভিং বলেছেন: ষার ভালো আচেন
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০১

লেখক বলেছেন: ষার মানে কী?

No comments:

Post a Comment