Sunday, March 1, 2009

ব্যক্তি লেখকের স্টাইল বনাম কথ্য ভাষার অকথ্য মর্মযাতনা

২৪ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:২৪
শেয়ার করুন: [Add to digg] [Add to FURL] [Add to blinklist] [Add to reddit] [Add to Technorati] [Add to YahooMyWeb] [Add to Co.mments] [Add to NewsVine] Facebook [new feature]

শিল্পীমাত্রই ভাষায় নিজের প্রকাশরীতিটাকে আলাদা কইরা চিনাইতে চান। আমরা যখন কমলকুমার মজুমদারের ভাষা নিয়া কথা কই তখন সেইটা কলকাতার ভাষা না ইংরেজি সিনট্যাক্সে লেখা ভাষা না ফেঞ্চ সিনট্যাক্সে লেখা ভাষা না কথ্য রীতির ভাষা না লেখ্য রীতির ভাষা সেই তর্কের চাইতে বড় হয়ে কমলকুমারের ভাষা হয়েই থাকে। অমিয়ভূষণ মজুমদার নানাভাবে বাংলা লেখছেন, মহিষকুড়ার উপকথার ভাষা, রাজনগরের ভাষা ও ফ্রাইডে আইল্যান্ডের ভাষার মধ্যে মেলা ফারাক। তবু সব মিলায়ে অমিয়ভূষণের ভাষা বইলা একটা জিনিশ সাহিত্যের পাঠকে চিনে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বলেন বর্ষায় পদ্মায় ইলিশ ধরার মরশুম চলিতেছে। তখন বুঝা যায়, আঞ্চভাষার শব্দসম্ভার তিনি তার লেখায় যথেষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করার পরও এইটা ওনার নিজস্ব স্টাইলের ভাষা।
ভাষার স্টাইলটা এক লেখকের ব্যক্তিত্বের মতো। এইটা তাকে প্রকাশে, প্রকাশভঙ্গিতে আলাদা হওয়ার জন্য তৈয়ার করতে হয়। নিজেকে চিনানোর জন্য সবার ভাষা থেকে পৃথক একটা ভাষায় নিজেকে জাহির করতে হয়। আর দুইটা লেখার পর, লেখকের ক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠাক্রমে সেই ভাষাকে সেই লেখক নিজস্ব বইলা চিনাইতে পারেন। লেখার মাধ্যমে তার ব্যক্তিত্ব পাঠকের কাছে আলাদা কইরা হাজির হয়। এইটা করতে গিয়া তিনি ভাষার মধ্যে কিছু পরিহাস আনেন, হয়তো কিছু নতুন শব্দ পুরানা শব্দ ব্যবহার করেন। নিজের দখলে থাকা আঞ্চলিক ভাষা থেকে শব্দ নেন। যার যেমন রুচি। স্টাইলের প্রয়োজনে লেখক যা করেন তাকে জেনারেল কোনো ব্যাপার বইলা মাইনা নেওয়া কঠিন বা লেখকও নিজের স্টাইলের সাধারণীকরণ দাবি করতে পারেন না। কথা ঠিক যে, রবীন্দ্রনাথের মতো লেখক যখন লিখতেছিলেন তখন বাংলা চলতি ভাষা গঠনের সেই সময়টায় রবীন্দ্রনাথের স্টাইল, ভাষারীতি বাঙালি শিক্ষিত সমাজের মধ্যে সাঙ্গ হইছিল। রবীন্দ্রনাথের লেখার ভাষারে আদর্শ ধইরা শিক্ষিত বাঙালি নিজের লেখার ভাষা ও মুখের ভাষারে ঠিক কইরা নিছিল। রবীন্দ্রনাথের পর আর কোনো লেখকের ভাগ্যে এমন শিকা ছেঁড়ে নাই, এইভাবে। কিছু শব্দ হয়তো কেউ নিছে, কোনো বাক্য এর বেশি না। ভাষার ব্যাপারে আজ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের চেয়ে বিপ্লবী কোনো ভাষা চিন্তক শিক্ষিত বাঙালির মধ্যে আসে নাই। উনি বাংলাভাষায় যত পরিমাণ মুখের ভাষাকে ঢুকাইছিলেন সেই উদারতা নিয়া আর কেউ আসে নাই। উনি মুখের ভাষার কাছাকাছি থাকার জন্য আজীবন ব্যাকুল আছিলেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের পর তিরিশের দশক পর্যন্ত একটা বিকাশ ঘটার পর মুখের ভাষার কাছাকাছি থাকার রাবীন্দ্রিক খায়েস কলকাতার শিক্ষিত সমাজ মনে রাখে নাই। ফলে, গত কয়েক দশকে কলকাতায় সাংবাদিক গদ্য, সাহিত্যিক গদ্য আর সভ্য গদ্যে কোনো উন্নতি হয় নাই। শিক্ষিত লোকেরা মান ভাষার একটা মান তৈরি করছেন। সেইভাষাটা সুন্দর বটে, কিন্তু সেটা স্থবির। সেইভাষার আর কোনো বিকাশ হয় নাই। হবে বলেও আশা করা দুরাশা। কলকাতা সেই যে নদীয়া কৃষ্ণনগরের ভাষাকে নিজের মান ভাষা বইলা মানলো তো আর কোনো দিকে ভাষার ভূগোলকে আগায়া নিতে পারলো না। কলকাতার গল্প উপন্যাস প্রবন্ধে হুগলি, মুরশিদাবাদ, বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূমের ভাষা কই? কোনো শব্দ কই?
কিন্তু বাংলাদেশে ভাষা নিয়া কিছুটা উন্নতির লক্ষণ দেখা যায়। এখানকার রক্ষণশীল বুদ্ধিজীবী সমাজ কলকাতার মতো একটা মান মান ভাষায় স্থির হওয়ার খায়েস মনে রাখেন বটে কিন্তু সেইটা এইখানে ঘটে নাই। ফলে, এইখানে গদ্যের নানা ভঙ্গি। সাহিত্যিক গদ্যের নানা প্রকাশ।
কলকাতার উপন্যাস (আনন্দ) পড়তে গিয়া বিষয় আলাদা হওয়া সত্ত্বেও আমার কেবলই মনে হয় যেন একটা লেখাই পড়তেছি। ভাষা যেন কথা কয় না। কিন্তু বাংলাদেশে শওকত ওসমান, শওকত আলী, সৈয়দ শামসুল হক, হাসান আজিজুল হক, মাহমুদুল হক যার লেখাই পড়ি ভাষার ভেতর দিয়া আরেকটা ভাষা কথা কয়। একটা গন্ধ টের পাই। সৈয়দ হকের মতো স্টাইলিস্ট লেখকের ভাষার সঙ্গে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ভাষার মিল নাই। বগুড়ার গন্ধ মাখা ভাষার পাশে সৈয়দ হকের রংপুরের গন্ধ মাখা ভাষাকে আমার ভাল লাগে। বুঝি সকল শুদ্ধতার বোধ ও আকাঙ্ক্ষা থাকার পরও সৈয়দ হক সেইভাষার ঘ্রাণ ছাড়াইতে পারেন নাই। বিচিত্র স্বাদ-গন্ধের এই ভাষার বৈচিত্রের মধ্যেই আমি লোকের মুখের ভাষার কাছাকাছি থাকার স্বাদটা পাই। একটা উপন্যাস থেকে আরেকটা উপন্যাসকে সহজে আলাদা করতে পারি। ব্যক্তি লেখকের স্টাইল ছাপিয়ে, স্যুট টাইয়ের বন্ধন ছাপিয়ে লুঙ্গি উঁকি দেয়। ঠিক মতো নাগরিক হইতে না পারার মধ্যেই আমি মুখের ভাষার গায়ে গায়ে সাহিত্যের ভাষার লেগে থাকার সম্ভাবনাটা টের পাই।
ক্লাশ নিয়া, সেমিনারে বক্তৃতা দিয়া, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বইলা আমাদের লেখক অধ্যাপক যখন গাড়িতে উইঠাই ড্রাইভারের সঙ্গে একটা শুদ্ধ-অশুদ্ধের মাঝামাঝি ভাষায় কথা বইলা উঠেন তখন সত্যিই আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।

(আরও লেখতে হবে। মেলা কথা জইমা আছে।)



প্রকাশ করা হয়েছে: শব্দচর্চা বিভাগে ।



* ২৯ টি মন্তব্য
* ৩৩৩ বার পঠিত,

Send to your friend Print
রেটিং দিতে লগ ইন করুন
পোস্টটি ৭ জনের ভাল লেগেছে, ১ জনের ভাল লাগেনি


এই লেখার লিংক টি আপনার বন্ধুকে পাঠান বন্ধ করুন





এই লেখার লিংক টি আপনার বন্ধুকে পাঠান বন্ধ করুন

আপনার নিজস্ব ই-মেইল ক্লায়েন্ট ব্যবহার করতে চাইলে এখানেক্লিক করুন

আপনার নাম :

আপনার ই-মেইল

আপনার বন্ধুদের ইমেইল

মেসেজ (নীচের মেসেজটি আপনার ইচ্ছেমত পরিবর্তন করুন
hi, i have been reading a nice wonderful post in http://www.somewhereinblog.net and would like to share it with you. Here is the post link http://www.somewhereinblog.net/blog/mahbubmoreblog/28790833 , please visit the link and rate it if you like. :-)

নিজেকেও একটি কপি পাঠান



১. ২৪ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:৩৩
comment by: (অ)গাণিতিক বলেছেন: লিখে ফেলেন! +
২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৪৮

লেখক বলেছেন: তাই করি।
২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৫২

লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ।
২. ২৪ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:৪০
comment by: মোহাম্মদ আরজু বলেছেন: পড়লাম । পরে কথা হবে। ''মেলা কথা জইমা আছে।''
২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৩

লেখক বলেছেন: হ।
৩. ২৪ শে এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৪
comment by: মাহবুব সুমন বলেছেন: ভালো লাগছে
২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৩

লেখক বলেছেন: thanx a lot.
৪. ২৪ শে এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:১৮
comment by: মেহরাব শাহরিয়ার বলেছেন: কলকাতার উপন্যাস (আনন্দ) পড়তে গিয়া বিষয় আলাদা হওয়া সত্ত্বেও আমার কেবলই মনে হয় যেন একটা লেখাই পড়তেছি

এই লাইনটাই সব বলে দিলো
২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৪

লেখক বলেছেন: আসলেই।
৫. ২৪ শে এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৪৫
comment by: সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেছেন: +
২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৫

লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ।
৬. ২৪ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৮:৪৬
comment by: ফারহান দাউদ বলেছেন: এইবারে মনে হয় আপনের বক্তব্য ধরতে পারলাম ঠিকমত। কিন্তু প্রশ্ন থাইকাই গেল,এই যে আজকাল ডিজুস ভাষা বইলা ১টা জিনিস রেডিওগুলাতে চালু হইসে যেইটা না বাংলা না ইংরেজি এইরকম কিসু ১টা,এইটার ব্যাপারে কি বলা যায়? এইটাও কি কোনদিন পাবলিকের বা সাহিত্যের জন্য স্ট্যান্ডার্ড ফর্মের রূপ নিতে পারে,যেহেতু আপনে বলছেন যে ভাষা সবসময়ই গতিতে থাকবে আর এইটাও গতির ১টা অংশ?
২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৮

লেখক বলেছেন: বক্তব্য স্পষ্ট করতে আরও সময় লাগবে। বিষয়টা তো আমিও ভাবতে ভাবতে বুঝার চেষ্টা করতেছি।
এইটা গতির একটা অংশ তো বটেই। তবে এর সঙ্গে অন্য একটা বিষয়ও জড়িত। ওয়াল্টার বেনজামিন এই নিয়া একটা কথা কইছিলেন। হাতের কাছে নাই। কিন্তু কথাটা আপনারে জানাবার বাসনা থাকলো। এখন বললে, ভুল বলবো এইটা নিশ্চিত তাই দেইখা বলতে চাই।
৭. ২৪ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৯:০০
comment by: মেহরাব শাহরিয়ার বলেছেন: এফ এম ল্যাংগুয়েজ নিয়ে আমিও শঙ্কিত , এটার দিকে নিউ জেনারেশনের আগ্রহ সব
২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:০৪

লেখক বলেছেন: নতুন সব জিনিশের প্রতি নতুন জেনারেশনের আগ্রহ সবসময় বেশি। এই নিয়া শঙ্কা প্রকাশ কইরা লাভ নাই। নতুন জেনারেশন সবসময় নতুন থাকে না, আবার নতুন বিষয়ও সবসময় নতুন থাকে না।
৮. ২৪ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৯:০০
comment by: মোস্তাফিজ রিপন বলেছেন:
পশ্চমিবঙ্গের জীবনমুখী গানের ধারার দিকে দৃষ্টি দিলে কি একই দৃশ্য চোখে পড়ে? ('ওলো সুজন আমার ঘরে কেন আইলো না')।
২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:০৬

লেখক বলেছেন: গানে অনেক বৈচিত্র্য টের পাই।
৯. ২৫ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:৪৭
comment by: দূরন্ত বলেছেন: হুমম..
২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:০৭

লেখক বলেছেন: হাাাাাাাাাাাম।
১০. ২৫ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ৩:০৩
comment by: মৃদুল মাহবুব বলেছেন: লেখা শেষ না হওয়ার আগে আর কোন কথা না। শেষ না হলে আলোচনা করা উচিত হবে না।
২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:১১

লেখক বলেছেন: সেই।
১১. ২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:০৩
comment by: রণদীপম বসু বলেছেন: আপনার ইস্টাইলটাও মন্দ না। বাকীটুকের অপেক্ষায় থাকলাম।
ধন্যবাদ। প্রিয়তে রাখলাম।
২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:১২

লেখক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
১২. ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:০৩
comment by: রিফাত হাসান বলেছেন: শওকত ওসমান, শওকত আলী, শাহেদ আলীতে পূর্ববাংলার ভাষার মিষ্টি ঘ্রাণ আছে (আপনি শাহেদ আলীর কথা বলেন নি, আমার কাছে এখনো ছোটগল্প বলতে তার অনেকগুলো অসাধারণ গল্প ভাসে), আর মাহমুদুল হকের মধ্যে ভাষার উত্তেজনা। এরা চারজনই আমার প্রিয়।
২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:২৯

লেখক বলেছেন: জিব্রাইলের ডানা ছাড়া আর কিছু পড়িনি শাহেদ আলীর।
ভাষাটা মনে পড়ে।
মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
১৩. ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:১১
comment by: নাজিম উদদীন বলেছেন: কইরা, বইলা, জইমা, মাইনা

আপনার স্টাইলও খারাপ না, তবে সব সময় যায় না।
২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৩১

লেখক বলেছেন: সেটাই।
১৪. ৩০ শে এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৪২
comment by: েফরদৌস মাহমুদ বলেছেন: আপনার সাথে এই বিষয়ে অবশ্যই আমি একমত, যে কলকাতার আনন্দ বাজারীয় কথাসাহিত্য ভাষায় অনেকটাই একঘেয়ে। সেই তুলনায় আমাদের কথাসাহিত্যের ভাষায় বৈচিত্র্য অনেক বেশি।
লেখাটা শেষ করেন, পুরোটা পড়তে চাই। পারলে আমার ব্লগে একটু ঢু মারেন।
আপনি কি আপনার মোবাইল নাম্বারটা পরিবর্তন করেছেন?
০৩ রা মে, ২০০৮ সকাল ১১:০২

লেখক বলেছেন: সিটিসেলটা বন্ধ। গ্রামীনটা চলে।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

No comments:

Post a Comment