Sunday, March 1, 2009

ওরিয়ানা ফালাচির নেয়া শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎকার

২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১২:১৪
শেয়ার করুন: [Add to digg] [Add to FURL] [Add to blinklist] [Add to reddit] [Add to Technorati] [Add to YahooMyWeb] [Add to Co.mments] [Add to NewsVine] Facebook [new feature]

(ব্লগে ওরিয়ানা ফালাচির নেয়া শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়া অনেক কথা হইছে। অনেক নিন্দা করা হইছে তাকে। কিন্তু আমার ধারণা খুব কম ব্লগারই সাক্ষাৎকারটি পড়েছেন। আমি ও ব্রাত্য রাইসু যখন যায়যায়দিন পত্রিকায় কাজ করতাম তখন ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ তারিখে ওরিয়ানা ফালাচির ওপর একটি সংখ্যা প্রকাশ করছিলাম। সেই সংখ্যায় ফালাচির নেওয়া মুজিবের সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হইছিল। সাক্ষাৎকারটি পুরাটা স্থান অভাবে প্রকাশ করা যায় নাই। সাক্ষাৎকারটির যায়যায়দিনে প্রকাশিত অংশের সফট কপি আমার কাছে আছিল। সেইটা এইখানে পোস্ট করলাম। ওরিয়ানা ফালাচি ২০০৬ এর ১৫ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন। সাক্ষাৎকারটি নেয়া হইছিল আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর অনুবাদ করা ইন্টারভিউ উইথ হিস্টরি বই থেকে। ফালাচি সাক্ষাৎকার নিছিলেন ১৯৭২ সালে ফেব্রুয়ারিতে।)

রবিবার সন্ধ্যা : আমি কলকাতা হয়ে ঢাকার পথে যাত্রা করেছি। সত্যি বলতে কি, ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী তাদের বেয়নেট দিয়ে যে যজ্ঞ চালিয়েছে তা প্রত্যক্ষ করার পর পৃথিবীতে আমার অন্তিম ইচ্ছা এটাই ছিল যে, এই ঘৃণ্য নগরীতে আমি আর পা ফেলবো না। এ রকম সিদ্ধান্ত আমি নিয়েই ফেলেছিলাম। কিন্তু আমার সম্পাদকের ইচ্ছা যে, আমি মুজিবের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। ভুট্টো তাকে মুক্তি দেয়ার পর আমার সম্পাদকের এই সিদ্ধান্ত যথার্থ ছিল। তিনি কি ধরনের মানুষ? আমার সহকর্মীরা স্বীকৃতি দিল, তিনি মহান ব্যক্তি, সুপারম্যান। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি দেশকে সমস্যামুক্ত করে গণতন্ত্রের পথে পরিচালিত করতে পারেন।
আমার স্মরণ হলো, ১৮ ডিসেম্বর আমি যখন ঢাকায় ছিলাম, তখন লোকজন বলছিল, ‘মুজিব থাকলে সেই নির্মম, ভয়ঙ্কর ঘটনা কখনোই ঘটতো না। মুজিব প্রত্যাবর্তন করলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না’। কিন্তু গতকাল মুক্তিবাহিনী কেন আরো ৫০ জন নিরীহ বিহারিকে হত্যা করেছে? ‘টাইম’ ম্যাগাজিন কেন তাকে নিয়ে বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে হেডলাইন করেছে? আমি বিস্মিত হয়েছি, এই ব্যক্তিটি ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে সাংবাদিক অ্যালডো শানতিনিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমার দেশে আমি সবচেয়ে সাহসী এবং নির্ভীক মানুষ, আমি বাংলার বাঘ, দিকপাল ... এখানে যুক্তির কোনো স্থান নেই ...।’ আমি বুঝে উঠতে পারিনি, আমার কি ভাবা উচিত।
সোমবার বিকাল : আমি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এবং আমার দ্বিধাদ্বন্দ্ব দ্বিগুণের অধিক। ঘটনাটা হলো, আমি মুজিবকে দেখেছি। যদিও মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য। সাক্ষাৎকার নেয়ার আগে তাকে একনজর দেখার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু এই কয়েকটা মুহূর্তই আমার চিত্তকে দ্বিধা ও সংশয়ে পূর্ণ করতে যথেষ্ট ছিল। যখন ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করি, কার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল? তিনি আর কেউ নন, মি. সরকার। আমার শেষবার ঢাকা অবস্থানকালে এই বাঙালি ভদ্রলোক আমার দোভাষী ছিলেন। তাকে দেখলাম রানওয়ের মাঝখানে। আমি ভাবিনি, কেন? সম্ভবত এরচেয়ে ভালো কিছু তার করার ছিল না। আমাকে দেখামাত্র জানতে চাইলেন, আমার জন্য তিনি কিছু করতে পারেন কি না? তাকে জানালাম, তিনি আমাকে মুজিবের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন। তিনি সোজা আমাকে নিয়ে রওনা হলেন এবং পনেরো মিনিটের মধ্যে আমরা একটা গেট দিয়ে প্রবেশ করলাম। গেটে মেশিনগানধারী মুক্তিবাহিনীর কড়া প্রহরা। আমরা রান্নাঘরে প্রবেশ করে দেখলাম, মুজিবের স্ত্রী খাচ্ছেন। সঙ্গে খাচ্ছে তার ভাগনে ও মামাতো ভাইবোনেরা। একটা গামলায় ভাত-তরকারি মাখিয়ে আঙ্গুল দিয়ে মুখে পুরে দিচ্ছে সবাই। এ দেশে খাওয়ার পদ্ধতি এ রকমই। মুজিবের স্ত্রী আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন।
ঠিক তখনই মুজিব এলেন। সহসা রান্নাঘরের মুখে তার আবির্ভাব হলো। তার পরনে এক ধরনের সাদা পোশাক, যাতে আমার কাছে তাকে মনে হয়েছিল একজন প্রাচীন রোমান হিসেবে। পোশাকের কারণে তাকে দীর্ঘ ও ঋজু মনে হচ্ছিল। তার বয়স একান্ন হলেও তিনি সুপুরুষ। ককেশীয় ধরনের সুন্দর চেহারা। চশমা ও গোফে সে চেহারা হয়েছে আরো বুদ্ধিদীপ্ত। যে কারো মনে হবে, তিনি বিপুল জনতাকে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি। তিনি স্বাস্থ্যের অধিকারী।
আমি সোজা তার কাছে গিয়ে পরিচয় পেশ করলাম এবং আমার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করলাম। মি. সরকার ভূমিতে পতিত হয়ে মুজিবের পদচুম্বন করলেন। আমি মুজিবের হাতটা আমার হাতে নিয়ে বললাম, ‘এই নগরীতে আপনি ফিরে এসেছেন দেখে আমি আনন্দিত, যে নগরী আশঙ্কা করছিল যে আপনি আর কোনোদিন এখানে ফিরবেন না।’ তিনি আমার দিকে তাকালেন একটু উষ্মার সঙ্গে। একটু অবজ্ঞার হাসি হেসে বললেন, ‘আমার সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলো।’
আমার দ্বিধা ও সন্দেহের কারণ উপলব্ধি করা সহজ। মুজিবকে আমি জেনে এসেছি একজন গণতন্ত্রী ও সমাজতন্ত্রী হিসেবে। যখন আমি দম নিচ্ছিলাম, একজন যুবক আমার কাছে এসে বললো, সে ভাইস সেক্রেটারি। বিনয়ের সঙ্গে সে প্রতিশ্রুতি দিল, বিকাল চারটার সময় আমি ‘সরকারি বাসভবনে’ হাজির থাকতে পারলে আমাকে দশ মিনিট সময় দেয়া হবে। তার সঙ্গে যারা সাক্ষাৎ করতে চায় তাদের সঙ্গে সেখানেই তিনি কথা বলেন। বিকাল সাড়ে তিনটায় নগরী কান্ত, নিস্তব্ধ, ঘুমন্ত মধ্যাহ্নের বিশ্রাম নিচ্ছে। রাস্তায় কাধে রাইফেল ঝুলানো মুক্তিবাহিনী টহল দিচ্ছে। যুদ্ধ শেষ হয়েছে এক মাসেরও বেশি সময় আগে। কিন্তু এখনো তাদের হাতে অস্ত্র আছে। তারা রাত-দিন টহল দেয়। এলোপাতাড়ি বাতাসে গুলি ছোড়ে এবং মানুষ হত্যা করে। হত্যা না করলে দোকানপাট লুট করে। কেউ তাদের থামাতে পারে না, এমনকি মুজিবও না। সম্ভবত তিনি তাদের থামাতে সক্ষম নন। তিনি সন্তুষ্ট এজন্য যে, নগরীর প্রাচীর তার পোস্টার সাইজের ছবিতে একাকার। মুজিবকে আমি আগে যেভাবে জেনেছিলাম, তার সঙ্গে আমার দেখা মুজিবকে মেলাতে পারছি না।
সোমবার সন্ধ্যা : আমি যে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছি এটা ছিল একটা দুর্বিপাক। তার মানসিক যোগ্যতা সম্পর্কে আমার সন্দেহ ছিল। এমনকি হতে পারে যে, কারাগার এবং মৃত্যু সম্পর্কে ভীতি তার মস্তিষ্ককে ভীষণভাবে আলোড়িত করেছে? তার ভারসাম্যহীনতাকে আমি আর কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারি না। একই সময়ে আমি বলতে চাচ্ছি, কারাগার এবং মৃত্যুর ভয় ইত্যাদি... সম্পর্কে কাহিনীগুলো... আমার কাছে এখনো খুব স্পষ্ট নয়। এটা কি করে হতে পারে যে, তাকে যে রাতে গ্রেফতার করা হলো, সে রাতে সব পর্যায়ের লোককে হত্যা করা হলো? কি করে কি করে এটা হতে পারে যে, তাকে কারাগারের একটি প্রকোষ্ঠ থেকে পলায়ন করতে দেয়া হলো, যেটি তার সমাধিসৌধ হতো? তিনি কি গোপনে ভুট্টোর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছিলেন? আমি যতো তাকে পর্যবেক্ষণ করেছি, ততো মনে হয়েছে, তিনি কিছু একটা লুকাচ্ছেন। এমনকি তার মধ্যে যে সার্বক্ষণিক আক্রমণাত্মক ভাব, সেটাকে আমার মনে হয়েছে আত্মরক্ষার কৌশল বলে।
ঠিক চারটায় আমি সেখানে ছিলাম। ভাইস সেক্রেটারি আমাকে করিডোরে বসতে বললেন, যেখানে কমপক্ষে পঞ্চাশজন লোকে ঠাসাঠাসি ছিল। তিনি অফিসে প্রবেশ করে মুজিবকে আমার উপস্থিতি সম্পর্কে জানালেন। আমি একটা ভয়ঙ্কর গর্জন শুনলাম এবং নিরীহ লোকটি কম্পিতভাবে আবার আবির্ভূত হয়ে আমাকে প্রতীক্ষা করতে বললেন। আমি প্রতীক্ষা করলাম, এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা, তিন ঘণ্টা, চার ঘণ্টা; রাত আটটা যখন বাজলো, তখনো আমি সেই অপরিসর করিডোরে অপেক্ষমাণ। রাত সাড়ে আটটায় আমাকে প্রবেশ করতে বলা হলো। আমি বিশাল এক কক্ষে প্রবেশ করলাম। একটি সোফা ও দুটো চেয়ার সে কক্ষে। মুজিব সোফার পুরোটায় নিজেকে বিস্তার করেছেন এবং দুজন মোটা মন্ত্রী চেয়ার দুটো দখল করে বসে আছেন। কেউ দাড়ালো না। কেউ আমাকে অভ্যর্থনা জানালো না। কেউ আমার উপস্থিতিকে গ্রাহ্য করলো না। মুজিব আমাকে বসতে বলার সৌজন্য প্রদর্শন না করা পর্যন্ত সুদীর্ঘক্ষণ নীরবতা বিরাজ করছিল। আমি সোফার ক্ষুদ্র প্রান্তে বসে টেপ রেকর্ডার খুলে প্রথম প্রশ্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু আমার সে সময়ও ছিল না। মুজিব চিৎকার শুরু করলেন, ‘হারি আপ, কুইক, আন্ডারস্ট্যান্ড? নষ্ট করার মতো সময় আমার নেই। ইজ দ্যাট কিয়ার?... পাকিস্তানিরা ত্রিশ লক্ষ লোক হত্যা করেছে, ইজ দ্যাট কিয়ারÑ আমি বললাম, ‘মি. প্রাইম মিনিস্টার...।’ মুজিব আবার চিৎকার শুরু করলেন, ‘ওরা আমার নারীদেরকে তাদের স্বামী ও সন্তানদের সামনে হত্যা করেছে। স্বামীদের হত্যা করেছে তাদের ছেলে ও স্ত্রীর সামনে। মা-বাপের সামনে ছেলেকে, ভাইবোনের সামনে ভাইবোনকে ... ‘মি. প্রাইম মিনিস্টার... আমি বলতে চাই...’
‘তোমার কোনো কিছু চাওয়ার অধিকার নেই, ইজ দ্যাট রাইট?’
‘আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো। কিন্তু একটা বিষয় সম্পর্কে আমি আরো কিছু জানতে চাই।’ বিষয়টা আমি বুঝতে পারছিলাম না। ‘মি. প্রাইম মিনিস্টার, গ্রেফতারের সময় কি আপনার ওপর নির্যাতন করা হয়েছিল।’
‘নো, ম্যাডাম নো। তারা জানতো, ওতে কিছু হবে না। তারা আমার বৈশিষ্ট্য, আমার শক্তি, আমার সম্মান, আমার মূল্য, বীরত্ব সম্পর্কে জানতো, আন্ডারস্ট্যান্ড?’
‘তা বুঝলাম। কিন্তু আপনি কি করে বুঝলেন যে তারা আপনাকে ফাসিতে ঝোলাবে? ফাসিতে ঝুলিয়ে কি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়?’
‘নো, নো ডেথ সেনটেন্স।’
এই পর্যায়ে তাকে দ্বিধাগ্রস্ত মনে হলো এবং তিনি গল্প বলতে শুরু করলেন, ‘আমি এটা জানতাম। কারণ ১৫ ডিসেম্বর ওরা আমাকে কবর দেয়ার জন্য একটা গর্ত খনন করে।’
‘কোথায় খনন করা হয়েছিল সেটা?’
‘আমার সেলের ভেতরে।’
‘আমাকে কি বুঝে নিতে হবে যে গর্তটা ছিল আপনার সেলের ভেতরে?’
‘ইউ মিস আন্ডারস্ট্যান্ড।’
‘আপনার প্রতি কেমন আচরণ করা হয়েছে মি. প্রাইম মিনিস্টার?’
‘আমাকে একটা নির্জন প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছিল। এমনকি আমাকে সাক্ষাৎকারের অনুমতি দেয়া হতো না, সংবাদপত্র পাঠ করতে বা চিঠিপত্রও দেয়া হতো না, আন্ডারস্ট্যান্ড?’’
‘তাহলে আপনি কি করেছেন?’
‘আমি অনেক চিন্তা করেছি, পড়াশোনা করেছি।’
‘আপনি কি পড়েছেন?’
‘বই এবং অন্যান্য জিনিস।’
‘তাহলে আপনি কিছু পড়েছেন।’
‘হ্যা, কিছু পড়েছি’।
‘কিন্তু আমার ধারণা হয়েছিল, আপনাকে কোনো কিছুই পড়তে দেয়া হয়নি।’
‘ইউ মিস আন্ডারস্টুড।’
‘তা বটে মি. প্রাইম মিনিস্টার। কিন্তু এটা কি করে হলো যে, শেষ পর্যন্ত ওরা আপনাকে ফাসিতে ঝোলালো না।’
‘জেলার আমাকে সেল থেকে পালাতে সহায়তা করেছেন এবং তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন।’
‘কেন, তিনি কি কোনো নির্দেশ পেয়েছিলেন?’
‘আমি জানি না। এ ব্যাপারে তার সঙ্গে আমি কোনো কথা বলিনি এবং তিনিও আমার সঙ্গে কিছু বলেননি।’
‘নীরবতা সত্ত্বেও কি আপনারা বন্ধুতে পরিণত হয়েছিলেন?’
‘হ্যা, আমাদের মধ্যে বহু আলোচনা হয়েছে এবং তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আমাকে সাহায্য করতে চান।’
‘তাহলে আপনি তার সঙ্গে কথা বলেছেন?’
‘হ্যা, আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি।’
‘আমি ভেবেছিলাম, আপনি কারো সঙ্গেই কথা বলেননি।’
‘ইউ মিস আন্ডারস্টুড।’
‘তা হবে মি. প্রাইম মিনিস্টার। যে লোকটি আপনার জীবন রক্ষা করলো আপনি কি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন না?’
‘এটা ছিল ভাগ্য। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি।’
এরপর তিনি ভুট্টো সম্পর্কে কথা বললেন। এ সময় তার কথায় কোনো স্ববিরোধিতা ছিল না। বেশ সতর্কতার সঙ্গেই বললেন তার সম্পর্কে। আমাকে মুজিব জানালেন, ২৬ ডিসেম্বর ভুট্টো তাকে খুজতে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য তাকে রাওয়ালপিন্ডিতে নেয়া। তার ভাষায়, ‘ভুট্টো একজন ভদ্রলোকের মতোই ব্যবহার করলেন। তিনি সত্যিই ভদ্রলোক।’ ভুট্টো তাকে বলেছিলেন, একটা যুদ্ধ হয়ে গেছে। অবশ্য মুজিব ব্লাকআউট ও যুদ্ধ বিমানের গর্জন থেকে বরাবরই যুদ্ধ সম্পর্কে আচ করেছেন। ভুট্টো তার কাছে আরো ব্যাখ্যা করলেন যে, এখন তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং তার কাছে কিছু প্রস্তাব পেশ করতে চান।
আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, ‘কি প্রস্তাব মি. প্রাইম মিস্টার?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘হোয়াই শুড আই টেল ইউ? এটা একটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রাইভেট অ্যাফেয়ার।’
‘আমার কাছে বলার প্রয়োজন নেই মি. প্রাইম মিনিস্টার, আপনি বলবেন ইতিহাসের কাছে।’
মুজিব বললেন, ‘আমিই ইতিহাস। আমি ভুট্টোকে থামিয়ে বললাম, যদি আমাকে মুক্তি দেয়া না হয়, তাহলে আমি আলাপ করবো না। ভুট্টো অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে উত্তর দিলেন, আপনি মুক্ত, যদিও আপনাকে শিগগির ছেড়ে দিচ্ছি না। আমাকে আরো দুই বা তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সম্পর্কে তার পরিকল্পনা তৈরি করতে শুরু করলেন। কিন্তু আমি অহঙ্কারের সঙ্গেই জানালাম, দেশবাসীর সঙ্গে আলোচনা না করে আমি কোনো পরিকল্পনা করতে পারি না।’ এই পর্যায়ে তাকে প্রশ্ন করলাম, ‘তাহলে তো কেউ বলতেই পারে যে, আপনাদের আলোচনা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে হয়েছিল।’

‘তা তো বটেই। আমরা পরস্পরকে ভালোভাবে জানি। খুব বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা ছিল। কিন্তু তা হয়েছিল আমার জানার আগে যে, পাকিস্তানিরা আমার জনগণের বিরুদ্ধে বর্বরোচিত নিপীড়ন করেছে। আমি জানতাম না, তারা বর্বরোচিতভাবে আমার মা-বোনকে হত্যা করেছে।
আমি তাকে থামিয়ে বললাম, ‘আমি জানি মি. প্রাইম মিনিস্টার, আমি জানি।’ তিনি গর্জে উঠলেন, ‘তুমি কিছুই জানো না; আমি তখন জানতাম না যে, তারা আমার স্থপতি, আইনবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, আমার চাকরকে হত্যা করেছে এবং আমার বাড়ি, জমি, সম্পত্তি ধ্বংস করেছে, আমার...।’

তিনি যখন তার সম্পত্তির অংশে পৌছলেন, তার মধ্যে এমন একটা ভাব দেখা গেল, যা থেকে তাকে এ প্রশ্নটা করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করলাম যে, তিনি সত্যিই সমাজতন্ত্রী কি না? তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যা...’। তার কণ্ঠে দ্বিধা। তাকে আবার বললাম, সমাজতন্ত্র বলতে তিনি কি বোঝেন? তিনি উত্তর দিলেন, ‘সমাজতন্ত্র’। তাতে আমার মনে হলো, সমাজতন্ত্র সম্পর্কে তার যথার্থ ধারণা নেই।
এরপর ১৮ ডিসেম্বর হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি রাগে ফেটে পড়লেন। নিচের অংশটুকু আমার টেপ থেকে নেয়া:
‘ম্যাসাকার? হোয়াট ম্যাসাকার?’
‘ঢাকা স্টেডিয়ামে মুক্তিবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত ঘটনাটি।’
‘ঢাকা স্টেডিয়ামে কোনো ম্যাসাকার হয়নি। তুমি মিথ্যে বলছো।’
‘মি. প্রাইম মিনিস্টার, আমি মিথ্যেবাদী নই। সেখানে আরো সাংবাদিক ও পনেরো হাজার লোকের সঙ্গে আমি হত্যাকা- প্রত্যক্ষ করেছি। আপনি চাইলে আমি আপনাকে তার ছবিও দেখাবো। আমার পত্রিকায় সে ছবি প্রকাশিত হয়েছে।’
‘মিথ্যেবাদী, ওরা মুক্তিবাহিনী নয়।’
“মি. প্রাইম মিনিস্টার, দয়া করে ‘মিথ্যেবাদী’ শব্দটি আর উচ্চারণ করবেন না। তারা মুক্তিবাহিনী। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল আবদুল কাদের সিদ্দিকী এবং তারা ইউনিফর্ম পরা ছিল।”
‘তাহলে হয়তো ওরা রাজাকার ছিল যারা প্রতিরোধের বিরোধিতা করেছিল এবং কাদের সিদ্দিকী তাদের নির্মূল করতে বাধ্য হয়েছে।’
‘মি. প্রাইম মিনিস্টার, কেউ প্রমাণ করেনি যে, লোকগুলো রাজাকার ছিল এবং কেউই প্রতিরোধের বিরোধিতা করেনি। তারা ভীতসন্ত্রস্ত ছিল। হাত-পা বাধা থাকায় তারা নড়াচড়াও করতে পারছিল না।’
‘মিথ্যেবাদী।’
“শেষবারের মতো বলছি, আমাকে ‘মিথ্যেবাদী’ বলার অনুমতি আপনাকে দেবো না।”
‘আচ্ছা সে অবস্থায় তুমি কি করতে?’
‘আমি নিশ্চিত হতাম যে, ওরা রাজাকার ও অপরাধী। ফায়ারিং স্কোয়াডে দিতাম এবং এভাবেই এই ঘৃণ্য হত্যাকা- এড়াতাম।’
‘ওরা ওভাবে করেনি। হয়তো আমার লোকদের কাছে বুলেট ছিল না।’
‘হ্যা তাদের কাছে বুলেট ছিল। প্রচুর বুলেট ছিল। এখনো তাদের কাছে প্রচুর বুলেট রয়েছে। তা দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গুলি ছোড়ে। ওরা গাছে, মেঘে, আকাশে, মানুষের প্রতি গুলি ছোড়ে শুধু আনন্দ করার জন্য।
এরপর কি ঘটলো : যে দুই মোটা মন্ত্রী ঘুমুচ্ছিলেন গোটা সাক্ষাৎকারের সময়টায়, সহসা তারা জেগে উঠলেন। আমি বুঝতে পারলাম না মুজিব কি বলে চিৎকার করছেন। কারণ কথাগুলো ছিল বাংলায়।
সোমবার রাত : গোটা ঢাকা নগরী জেনে গেছে, মুজিব ও আমার মধ্যে কি ঘটেছে। শমশের ওয়াদুদ নামে একজন লোক ছাড়া আমার পক্ষে আর কেউ নেই। লোকটি মুজিবের বড় বোনের ছেলে। এই যুবক নিউ ইয়র্ক থেকে এসেছে তার মামার কাছে। তার মতে মুজিব ক্ষমতালোভী এবং নিজের সম্পর্কে অতি উচ্চ ধারণাসম্পন্ন অহঙ্কারী ব্যক্তি। তার মামা খুব মেধাসম্পন্ন নয়। বাইশ বছর বয়সে মুজিব হাইস্কুলের পড়াশোনা শেষ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির সচিব হিসেবে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এছাড়া আর কিছু করেননি তিনি। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে, মুজিব একদিন প্রধানমন্ত্রী হবেন। ওয়াদুদের মতে, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কারণ এটা নয়। আসলে একমাত্র ওয়াদুদের মাকেই মুজিব ভয় করেন। এই দুঃখজনক আচরণের জন্য তিনি পারিবারিকভাবে প্রতিবাদ জানাবেন। সে আরো জানালো, আমার সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে তা সে তার মাকে জানাবে, যাতে তিনি এ ব্যাপারে মুজিবের সঙ্গে কথা বলেন। সে আমাকে আরো বললো, সরকারি দফতরে গিয়ে এ ব্যাপারে আমার প্রতিবাদ করা উচিত এবং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলা উচিত। কারণ প্রেসিডেন্ট খাটি ভদ্রলোক।
মুজিব সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্যাবলী তার জন্য বিপর্যয়কর। ১৯৭১ এর মার্চে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকা-ের কিছুদিন আগে ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টো ঢাকায় এসেছিলেন। ইয়াহিয়া খান যথাশিগগির ফিরে যান। কিন্তু ভুট্টো ঢাকায় রয়ে যান। তাকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে রাখা হয়। তার অ্যাপার্টমেন্ট ছিল ৯১১-৯১৩।
ইন্টারকন্টিনেন্টালের সর্বোচ্চ তলায় তখন ভুট্টোর ভূমিকা ছিল নিরোর মতো। নগরী যখন জ্বলছিল এবং এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ চলছিল, ভুট্টো তখন মদপান করছিলেন আর হাসছিলেন। পরদিন সকাল ৭টায় তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। আমি দেখেছি, যারা এক সময় পাকিস্তানিদের ভয়ে ভীত ছিল, তারা এখন মুজিবকেই ভয় করে। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা সম্পর্কে প্রচুর কথাবার্তা চলে এ দেশে। কিন্তু সবসময়ই তা বলা হয় ফিসফিসিয়ে, ভয়ের সঙ্গে। লোকজন বলাবলি করে যে, এই সংঘাতে মুজিব খুব সামান্যই হারিয়েছেন। তিনি ধনী ব্যক্তি। অত্যন্ত ধনবান। তার প্রত্যাবর্তনের পরদিন তিনি সাংবাদিকদের হেলিকপ্টার দিয়েছিলেন। কেউ কি জানে কেন? যাতে তারা নিজেরা গিয়ে মুজিবের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি অবলোকন করে আসতে পারে। এখনো তিনি সমাজতন্ত্রের কথা বলেন, জাতীয়তাবাদের কথা বলেন। তিনি কি তার জমিজমা, বাড়ি, বিলাসবহুল ভিলা, মার্সিডিজ গাড়ি জাতীয়করণ করবেন?
ভুট্টোর সঙ্গে মুজিবের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯৬৫ সালে, যখন তিনি ভারতের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তকে অরক্ষিত রাখার কারণে পশ্চিম পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেন। একজন নেতা হিসেবে তার মূল্য ছিল খুবই কম। তার একমাত্র মেধা ছিল মূর্খ লোকদের উত্তেজিত করে তোলার ক্ষেত্রে। তিনি ছিলেন কথামালার জাদুকর ও মিথ্যার জাদুকর; কিছুদিন আগে এক জনসভায় বক্তৃতাকালে তিনি বলেছিলেন, করাচির রাস্তাগুলো সোনা দিয়ে মোড়া। তা দিয়ে হাটলে চোখ ধাধিয়ে যায়। অর্থনীতির কিছুই বুঝতেন না তিনি। কৃষি ছিল তার কাছে রহস্যের মতো। রাজনীতি ছিল প্রস্তুতিবিহীন। কেউ কি জানে ১৯৭০ এর নির্বাচনে তিনি কেন বিজয়ী হয়েছিলেন? কারণ সব মাওবাদী তাকে ভোট দিয়েছিল। সাইকোনে মাওবাদীদের অফিস বিধ্বস্ত হয়েছিল এবং তাদের নেতা ভাসানী আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জনগণকে যদি আবার ভোট দিতে বলা হয়, তাহলে মুজিবের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্নতর হবে, যদি তিনি বন্দুকের সাহায্যে তার ইচ্ছাকে চাপিয়ে দিতে না চান। সেজন্যই তিনি মুক্তিবাহিনীকে অস্ত্রসমর্পণের নির্দেশ দিচ্ছেন না এবং আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, রক্তপিপাসু কসাই, যে ঢাকা স্টেডিয়ামে হত্যাযজ্ঞ করেছিল, সেই আবদুল কাদের সিদ্দিকী তার ব্যক্তিগত উপদেষ্টা। ইনডিয়ানরা তাকে গ্রেফতার করেছিল; কিন্তু মুজিব তাকে মুক্ত করেন।
এখন আমরা গণতন্ত্রের কথায় আসতে পারি। একজন মানুষ কি গণতন্ত্রী হতে পারে, যদি সে বিরোধিতা সহ্য করতে না পারে? কেউ যদি তার সঙ্গে একমত না হয়, তিনি তাকে ‘রাজাকার’ বলেন। বিরোধিতার ফল হতে পারে ভিন্নমত পোষণকারীকে কারাগারে প্রেরণ। তার চরিত্র একজন একনায়কের, অসহায় বাঙালিরা উত্তপ্ত পাত্র থেকে গনগনে অগ্নিকু-ে পতিত হয়েছে। বাঙালি রমণীদের প্রতি সম্মান জানিয়েই বলছি, তাদের সম্পর্কে কথা না বলাই উত্তম। তিনি নারীদের পাত্তাই দেন না...।
বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আমাকে আবার মুজিবের সঙ্গে দেখা করতে বললেন। সব ব্যবস্থা পাকা।
প্রেসিডেন্ট যে প্রচেষ্টা করেছিলেন তা খুব একটা সফল হয়নি। তিনি দুজন কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছিলেন, যাতে তার নির্দেশ পালন করা হয়। মুজিবের কাছে একটা হুঙ্কার ছাড়া তারা আর কিছু পায়নি। তবে এবার একটা করিডোরের বদলে একটা কক্ষে অপেক্ষা করার অনুমতি পেলাম। আমি বিকাল চারটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। একজন বয় আমার চায়ের কাপ পূর্ণ করে দিচ্ছিল এবং এভাবে আমি আঠারো কাপ চা নিঃশেষ করলাম। উনিশ কাপের সময় আমি চা ফোরে ছুড়ে ফেলে হেটে বেরিয়ে এলাম। আমাকে অনুসরণ করে হোটেলে এলো মুজিবের সেক্রেটারি ও ভাইস সেক্রেটারি। তারা বললো, মুজিব অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়েছেন এবং আগামীকাল সকাল সাড়ে সাতটায় আমার সঙ্গে দেখা করতে চান।
পরদিন সকালে ঠিক সাতটায় আমি হাজির হলাম এবং সকাল সাড়ে নয়টায় মার্সিডিজযোগে মুজিবের আগমন পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হলো। একটা কথাও না বলে তিনি অফিসে প্রবেশ করলেন। আমিও অফিসে ঢুকলাম। আমার দিকে ফিরে তিনি উচ্চারণ করলেন, ‘গেট আউট’। আমি কক্ষ ত্যাগ করতে উদ্যত। তিনি বললেন, ‘গেট ইন হিয়ার।’ আমি ফিরলাম এবং তখনই তিনজন লোক পোস্টার আকৃতির একটি ছবি নিয়ে এলো। দেখে তিনি বললেন, ‘চমৎকার’। এরপর তিনি বললেন, এই মহিলা সাংবাদিককে দেখাও। আমি ‘চমৎকার’ শব্দটি উচ্চারণ করলাম। এ ছিল এক মারাত্মক ভুল। তিনি বজ্রের মতো ফেটে পড়লেন। তিনি ক্ষিপ্ত। ছবিটি ফোরে ছুড়ে দিয়ে বললেন, ‘এটা চমৎকার নয়’। আমি কিছু না বুঝে নিশ্চুপ থাকলাম।
আমি তার উত্তেজনা হ্রাস করতে সক্ষম হলাম। যেহেতু আমি ভুট্টোর সঙ্গে তার সত্যিকার সম্পর্কটা খুজে পেতে চাই, সে জন্য ভুট্টো সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। নামটা বলার মুহূর্তেই তিনি জ্বলে উঠলেন এবং বললেন, তিনি শুধু বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দিতে চান। আমি প্রশ্ন করলাম, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গকে যুক্ত করার সম্ভাবনা আছে কি না?’ খানিকটা দ্বিধান্বিত হয়ে তিনি বললেন, ‘এ সময়ে, আমার আর কোনো আগ্রহ নেই।’ এই বক্তব্যে ইন্দিরা গান্ধীকেও বিস্মিত হতে হবে যে, মুজিব কলকাতা করায়ত্ত করতে চায়। আমি বললাম, তার মানে আপনি বলতে চান, অতীতে আপনার আগ্রহ ছিল এবং ভবিষ্যতে পুনর্বিবেচনা করার সম্ভাবনা আছে।’ ধীরে ধীরে তিনি উপলব্ধি করলেন, আমি তাকে একটা ফাদে ফেলতে চাচ্ছি। নিজের ভুল সংশোধন করার বদলে তিনি টেবিলে মুষ্টাঘাত করে বলতে শুরু করলেন, আমি সাংবাদিক নই বরং সরকারি মন্ত্রী। আমি তাকে প্রশ্ন করছি না, দোষারোপ করছি। আমাকে এখনই বের হয়ে যেতে হবে এবং আবার আমি যেন এ দেশে পা না দিই।
এই পর্যায়ে আমি নিজের ওপর সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললাম এবং আমার মাঝে উত্তেজনার যে স্তূপ গড়ে উঠেছিল তা বিস্ফোরিত হলো। আমি বললাম, তার সবকিছু মেকি, ভুয়া। তার পরিণতি হবে খুবই শোচনীয়। যখন তিনি মুখ ব্যাদান করে দাড়ালেন, আমি দৌড়ে বেরিয়ে এলাম এবং রাস্তায় প্রথম রিকশাটায় চাপলাম। হোটেলে গিয়ে বিল পরিশোধ করলাম। স্যুটকেসটা হাতে নিয়ে যখন বেরুতে যাচ্ছি, তখন দেখলাম মুক্তিবাহিনী নিচে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা এ কথা বলতে বলতে আমার কাছে এলো যে, আমি দেশের পিতাকে অপমান করেছি এবং সেজন্য আমাকে চরম মূল্য দিতে হবে। তাদের এ গোলযোগের মধ্যে পাচজন অস্ট্রেলিয়ানের সাহায্যে পালাতে সক্ষম হলাম। তারা এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে প্রবেশ করছিল। এয়ারপোর্টে দুজন ইনডিয়ান কর্মকর্তা আমাকে বিমানে উঠিয়ে নিলেন এবং আমি নিরাপদ হলাম।
(২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
ইন্টারভিউ উইথ হিস্টরী থেকে
অনুবাদ : আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু



প্রকাশ করা হয়েছে: অন্যের লেখা, পঞ্চতন্ত্র বিভাগে ।



* ৩১ টি মন্তব্য
* ৮৪৫ বার পঠিত,

Send to your friend Print
রেটিং দিতে লগ ইন করুন
পোস্টটি ৮ জনের ভাল লেগেছে, ৩ জনের ভাল লাগেনি


এই লেখার লিংক টি আপনার বন্ধুকে পাঠান বন্ধ করুন





এই লেখার লিংক টি আপনার বন্ধুকে পাঠান বন্ধ করুন

আপনার নিজস্ব ই-মেইল ক্লায়েন্ট ব্যবহার করতে চাইলে এখানেক্লিক করুন

আপনার নাম :

আপনার ই-মেইল

আপনার বন্ধুদের ইমেইল

মেসেজ (নীচের মেসেজটি আপনার ইচ্ছেমত পরিবর্তন করুন
hi, i have been reading a nice wonderful post in http://www.somewhereinblog.net and would like to share it with you. Here is the post link http://www.somewhereinblog.net/blog/mahbubmoreblog/28791687 , please visit the link and rate it if you like. :-)

নিজেকেও একটি কপি পাঠান



১. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১২:২৫
comment by: সামী মিয়াদাদ বলেছেন: হুমমম...পড়ছি ঐটা
২. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১২:৪৫
comment by: সোহানের রোজনামচা বলেছেন: ওরিয়ানা ফালাচ্চি নিজে কিন্তু এখানে একজন সাংবাদিকের মত আচরণ করেছেন বলে মনে হচ্ছে না। আর তিনি যথেষ্টই আক্রমনাত্নক ছিলেন এবং তাঁর লেখাকে আমার মনে হচ্ছে মুজিবকে একজন নেগেটিভে হিরো হিসেবে তিনি দেখাতে চেয়েছেন যা তার কোন মিশন ছিল বলে মনে হচ্ছে। যেভাবে তিনি মুজিব সম্পকে' লিখেছেন মনে হল যেন হিন্দী ছবির কোন অশিক্ষিত ভিলেনের ছবি দেখছি যা অবশ্যই মিথ্যা। আমি ফালাচ্চির এই লেখাকে সত্যি মনে করিনা।
৩. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১২:৫১
comment by: মদন বলেছেন: লেখিকার শুরুর লেখা পড়েই মনে হয়েছে তিনি আগে থেকেই নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে ছিলেন। কেন?
৪. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১:১০
comment by: বৃত্ত বলেছেন: অবশ্যই প্লাস।

আমি সেদিনের ম্যাগাজিনটা অনেকদিন যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম। এখনও মেবি আছে, বইয়ের স্তুপে হয়ত চাপা পড়ে গেছে।

আমি ঠিক এই লেখাটিই ব্লগে আশা করছিলাম।

কন্টেন্ট সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নাই।

আগেই ম্যাগাজিনে পুরোটা পড়েছি। সে ভিত্তিতেই বলছি- ওরিয়ানা ফালাটি ইসলাম বিদ্বেষী ছিলেন। সে দিক দিয়ে তাঁকে অপছন্দ করি। কিন্তু সাংবাদিক হিসেবে তিনি ছিলেন- আধুনিক ভাষায় বলতে গেলে- একেবারে ''কঠিন''।

ধন্যবাদ।
৫. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১:৩৬
comment by: মোস্তফা আমিন বলেছেন: দোষ বা ভুলটা কার জানি না, তবে কিছু জিনিস মেলানো জরুরি; যেমন ২০০৬ সালে যায়যায়দিনের চরিত্র, এই সাক্ষাৎকারটির অনুবাদকের চরিত্র এবং অসংগতিতে ভরা সাক্ষাৎকার -সুতরাং সাংবাদিকের চরিত্র বা উদ্দেশ্য।
সেই সময়কার বাংলাদেশ নিয়ে কি ভীষন ষড়যন্ত্র হয়েছে তা জানতে ঐ সময়কার বৈশ্বিক রাজনীতি বা দেশীয় রাজনীতি কেমন ছিল জানাটা খুব জরুরি। শুধু বলি, ফালাচিকে চিনি না - প্রয়োজনও নাই, তবে আনোয়ার হোসেন মন্জু (সাথে মইনুল হোসেন, এনায়েতউল্লাহ খান সহ আরো দুইজন) যে সিআইএ-এর বেতনভোগি সাংবাদিক ছিলো তা বোধহয় আজ কারো অজানা না। আমি যদি নেলসন ম্যান্ডেলা'র চরিত্রহরণের পণ করি, তো তার জন্য উপাদান বের করা তো নস্যি!
২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:১৯

লেখক বলেছেন: এই আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নন।
ইনি ইত্তেফাকের প্রকাশক নন। অনুবাদক ও সাংবাদিক।
৬. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১:৪৮
comment by: হমপজদ বলেছেন: পরছি
৭. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১:৫২
comment by: রবিউলকরিম বলেছেন: ওরিয়ানার যে কটি সাক্ষাৎকার অনুবাদিত হওয়ার কারণে আমি পাঠ করেছি, সবকটিতেই তিনি যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন। এটা হয়ত তার সীমাবদ্ধতা। প্রথমেই তিনি এমনভাবে আলাপ শুরু করেন বা উপস্থিতি জানান দেন যেন তিনি ছাড়া জগতে প্রধান কিছু হতে পারে না। আর তার পড়াশোনাও আমার মাঝে সন্দেহের সৃষ্টি করে। তারই সাক্ষাৎকার নেয়া উচিত ছিল বলে আমার মনে হয়। তাহলে হয়ত তার মনোজগতটা বোঝা যেত। আর বিদেশীরা যে বাংলাদেশকে সবসময় উলটো করে দেখে , আমাদের অনুভূতিও বুঝতে চায় না এটা তো প্রকাশিত। তারা আমাদের গণতন্ত্র শেখাতে চায় অথচ যখন ইরাকে বোমা ফেলা হয়, ফিলিস্তিনে গোলা ছোড়া হয়... তখন তাদের গণতন্ত্র কোথায় থাকে এটা বিস্ময়!
৮. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১:৫৭
comment by: ভক্কডা বলেছেন: খুবই ইন্টারেস্টিং। অদ্ধেকটা পরছি আর পুরাটাই শুকেসে রাখছি। সময় কইরা পরুম। থ্যাংক্যু
৯. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:২৯
comment by: মো: খায়রুল বাসার বলেছেন: ৫০ জন নিরীহ বিহারী ? কথাটা শুনলে হাসি পায় । বিহারীদের অত্যাচার আমি দেখেছি । বিহারীরা যেখানে গিয়েছে সেখানেই প‌্যাচ লাগিয়েছে । তাই আটকাপড়া বিহারীদের পাকিস্তানী সরকার নিতে চায় না ।
আমার অপছন্দের সাংবাদিক ওরিয়ানা ফালাচি । সেও সুযোগ বুঝে শেখ মুজিবকে আক্রমন করেছিলো ।
একটা কথা মনে রাখতে হবে, সাংবাদিকরা ফেরেশতা না । তারাও কোন না কোনভাবে বায়াসড থাকে । এই সাংবাদিক একজন ইহুদি সমর্থক আমেরিকান সাংবাদিক আর তখন আমেরিকা মুক্তিযোদ্ধ বিরোধিতাকারী অন্যতম একটি দেশ ।
১০. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:৩২
comment by: মাঠশালা বলেছেন: সাক্ষাৎকারটি যায়যায়দিনে আগে পড়েছি। পড়ে মনে হয়েছিল- ওরিয়ানা ফালাচি একজন শুধু সাংবাদিক হিসেবে তৃতীয় বিশ্বের একজন জননেতার সাথে কথা বলছেন না বলছেন আসলে পশ্চিমা বিশ্বের সাংবাদিক হিসেবে। যে সাক্ষাৎকারের পেছনে ওৎপেতে রয়েছে তখনকার একজন অবিসংবাদিদ নেতার ব্যক্তিত্ব ও গ্রহনযোগ্যতাকে গ্রাস করারই এক নগ্ন অভিপ্রায়। যা তখনকার আন্তর্জাতিক বিশ্বে পশ্চিমা সার্থসংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত জরুরী ছিল। তখনকার সময়ে যেখানে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বজায় রাখা খুবই জরুরী ছিল আর তা পশ্চিমা বিশ্বর জন্য কোন ভাবেই কাঙ্খিত ছিল না। আর আমেরিকাতো যুদ্ধকালীন সময় সরাসরি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। যুদ্ধের পরপর ভুট্টোর সাথে মুজিবের সম্পর্কটির সত্য উদঘাটনের আপাত মহৎ প্রকল্পটি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গকে যুক্ত করার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করার আপাত সৎ কৌশলটি প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমা বিশ্বের দূরভিসন্ধিকেই প্রকাশ করে দেয়। বাংলাদেশের তৎকালীন জরুরী সময়ে ভারত এবং পাকিস্তানের সাথে যে সত্য সম্পর্কটি ইতোমধ্যে আর অস্বীকারের উপায় খোলা থাকল না। যা সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য হয়ে পড়েছে তাকে আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে তছনছ করে উপস্থাপনের পাপিষ্ঠ কর্মকান্ড হিসেবেই আমি মূল্যায়ন করতে আগ্রহী।
১১. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৪৭
comment by: মামু বলেছেন:
কতা হইল ফালাচি নেতি বাচক মনুভাব নিয়া সাক্ষাতকার নিচে তাতে দুষ কি?

উতত্তা দাতা তো বুইজ্যাই উত্তর দিচে।

সুতরাং সব দায়িত্ব তো উত্তর দাতার।
নাকি ফালাচির নেতিবাচক মনভাবের জন্য উত্তর দাতা দায়ী না?
১২. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৫
comment by: মাইনুল বলেছেন: খুবই দরকারী একটা ডকুমেন্ট এইটা। অন্তত বাংলাদেশের ততকালীন সময়ের সঠিক ইতিহাসের তুলে আনার জন্য। আসলে আমরা বাংগালীরা যাকে পছন্দ করি তাকে দেবতার আসনে বসাতে চাই। তিনি যে একজন মানুষ এবং তিনি যে ভুল করতে পারেন এটা আমরা ভুলে যাই।
ওরিয়ানা একজন বিখ্যাত রিপোর্টার, তার কাজই তো খুচিয়ে খুচিয়ে প্রশ্ন করে সত্য বের করে আনা। তার প্রতি এধরনের বিহেভ করা উচিত হয়নি।
বেনজীর ভুট্টো মারা যাবার পর মানব জমিনে সম্পাদক মতিউর রহমানের সাথে বেনজীরের একটা ইন্টারভিউ ছাপে। সেখানে আছে বেনজীর বলেছেন,যখন বংগবন্ধুকে পাকিস্থানের জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয় তখন তিনি নাকি ভুট্টোকে কথা দিয়েছিলেন যে তিনি দুই পাকিস্থান এক রাখার চেস্টা করবেন। এই ব্যাপারগুলির কিছু কিছু জানতো বলেই ওরিয়ানা তার ইন্টারভিউতে হয়তো জেরা করতে চেয়েছিল।
১৩. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:০৯
comment by: মাইনুল বলেছেন: ওরিয়ানা কে নিয়ে কয়েকদিন আগে দেখলাম ঝড় বয়ে গেছিলো। অথচ আসল ইন্টারভিউটাতে যারা বিতর্ক তুলেছিল তারা কেউ ই কমেন্ট করতেছে না। সত্যিই আশ্চর্য ব্যাপার !
১৪. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:৪৯
comment by: সব্যসাচী বলেছেন:
পড়লাম ইন্টারভিউটা।
১৫. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২৫
comment by: নতুন বলেছেন: হুম... জটিল বেপার...
১৬. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:১৬
comment by: বিপ্লব রহমান বলেছেন: এই লেখাটি আগেও পড়েছিলাম। এখন আবারো পড়লাম।

পড়ে মনে হয়েছে লেখিকা আগে থেকেই নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে ছিলেন। কেন?

এরপরেও স্টেডিয়ামে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার যে বিষয়টি তিনি অবতারনা করেছেন এটি সত্যিই চিন্তার বিষয়।...

তবে এ কথাও সত্যি, একটি সদ্য স্বাধীন দেশে এ ধরণের নৈরাজ্য খুব বোধহয় অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া অনুমান করি ঘাতক-দালালদের হিংস্রতার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভও ছিলো মারাত্নক।

অনেক ধন্যবাদ।
১৭. ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১১:৪২
comment by: ফারহান দাউদ বলেছেন: মনে হইলো জেনারেল নিয়াজীর নেয়া শেখ মুজিবের সাক্ষাৎকার পড়তাসি,এই মহিলা তো মানসিক রোগী ছিল মনে হয়। এমন না যে আমি শেখ মুজিবের মহাভক্ত,একজন নেতার দোষত্রুটি থাকবেই কিছু কিন্তু এইখানে মহিলা তো আগাগোড়া মুক্তিযোদ্ধাদের সহ গণহত্যাকারী টাইপ কিছু দেখাতে চাইল,(আহা,নিরীহ বিহারীগুলা,কত দরদ)শর্মিলা বোসের কথা মনে হচ্ছে না? বা ইরাক যুদ্ধের এমবেডেড সাংবাদিকদের কথা?
১৮. ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:৪৯
comment by: মাইনুল বলেছেন: অনেক কমেন্টকারী দেখছি বিহারী হত্যাকে সাপোর্ট করছেন। যা সত্যিই দুঃখজনক। বিহারীরা পাকিস্থান এর পক্ষে ছিল, যা খুবই সাভাবিক তাদের জন্য, কেননা তাদের কে ইন্ডিয়া ছাড়তে হয়েছিল এই পাকিস্থানের জন্য ই। আর এই জন্য নির্বিচারে বিহারী দের হত্যা করতে হবে এইটা বলা টা অমানবিক। আর কোন মানুষকে বিচার বহির্ভুত ভাবে হত্যা করাটা খুন করা ছাড়া আর কিছু না ?
১৯. ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:৫০
comment by: মেহরাব শাহরিয়ার বলেছেন: ফালাচি মারা যাবার পর তার ২/৩ টা লেখা পড়েছিলাম , সে সময়টা তাকে অস্থির , অসংলগ্ন মনে হয়েছিল , তবে যেখান থেকে পড়েছি , সেখানে তাকে নিয়ে অনেক স্তুতি ছিল । আমি নিশ্চিত ছিলাম মুসলিমদের নিয়ে তার প্রচন্ড আক্রোশের দরুণ পশ্চিমা দুনিয়ায় অনেকর কাছেই তিনি নন্দিত ।

শেখ মুজিবের নেয়া সাক্ষাৎকারটির কথা আগে জানা ছিলো না , পড়লাম এবং অবাক হলাম । ফালাচি সম্পর্কে পুরনো ধারণাই আরো বদ্ধমূল হলো ।
২০. ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১:৫৯
comment by: হ্যারি সেলডন বলেছেন: ফালাচি একটা মনোবিকারগ্রস্থ উইচ!
২১. ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ২:০০
comment by: হ্যারি সেলডন বলেছেন: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কলামিষ্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেছেন: +
২২. ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ৮:১১
comment by: মোস্তাফিজ রিপন বলেছেন:
রূপান্তর প্রকাশনা থেকে ১৯৯২ সালে ওরিয়ানা ফাল্লাচির 'Letter To a Child Never Born' গ্রন্থের বাংলায় অনুবাদ প্রকাশিত হয় 'হাত বাড়িয়ে দাও' শিরনামে। গ্রন্থটির অনুবাদ করেছিলেন আনু মুহাম্মদ, আর পরিবেশক ছিলো আজিজ সুপার মার্কেটের 'পড়ুয়া'। খুব সম্ভবত একই বছরে রূপান্তর প্রকাশনা প্রকাশ করেছিলো 'Interview With History' যেখানে মাহবুব মোর্শেদের পোষ্টের এই সাক্ষাৎকারটিও সংযোজিত আছে। একই সাথে আছে- গাদ্দাফি, সাদ্দাম হোসেন, ইয়াসির আরাফাত, আয়াতুল্লাহ খোমেনিসহ কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্রের আলোচিত রাষ্ট্রনায়কদের সাক্ষাৎকার।

ফাল্লাচি ইয়াসির আরাফাতকে সমকামী বলে সম্বোধন করেছিল বলে একদল ছাত্র '৯২-এর বাংলাএকাডেমীর বইমেলায় বইটি নিষিদ্ধ করার দাবীতে মিছিল করেছিল।
২৩. ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৪
comment by: ত্রিভুজ বলেছেন: বিশাল লেখা... সময় নিয়ে পড়তে হবে। শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ মোর্শেদ ভাই।
২৪. ২৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ১:৪২
comment by: ব্লুজ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
২৫. ২৯ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:৫৭
comment by: শাওন বলেছেন: পোস্ট টা খুজতেছিলাম । পেলাম । + ।
২৬. ০১ লা মে, ২০০৮ দুপুর ১:৩৫
comment by: রাসেল ( ........) বলেছেন: অতিরঞ্জিত মনে হয়েছে অনেক কিছুই। "ভুমিতে নত হয়ে পদচুম্বন" সংস্কৃতি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আরোপিত মনে হয়েছে। সম্ভবত সাংস্কৃতিক ভিন্নতা আর আমাদের প্রতি পশ্চিমা মানুষের চিরন্তন দৃষ্টিভঙ্গি এর কারণ।
কিছু জংলী মানুষ স্যুট টাই পড়ে পশ্চিমা মানুষের সাথে মিশছে, তারা আসলে বাঁদরের বংশধর, এখন ঠিক বিবর্তন সমাপ্ত করে সম্পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারে নি। তারা সুযোগ পেলেই মানুষ ধরে বেঁধে জবাই করে খায়- এই মানসিকতা নিয়ে সাংবাদিকতা করা উচিত না। ওরিয়ানা ফালুচ্চির লেখা পড়ি নি এবং এটা পড়বার পরে আরও না পড়ার বাসনাটা তীব্র হলো।

"আমরা রান্নাঘরে প্রবেশ করে দেখলাম, মুজিবের স্ত্রী খাচ্ছেন। সঙ্গে খাচ্ছে তার ভাগনে ও মামাতো ভাইবোনেরা। একটা গামলায় ভাত-তরকারি মাখিয়ে আঙ্গুল দিয়ে মুখে পুরে দিচ্ছে সবাই। এ দেশে খাওয়ার পদ্ধতি এ রকমই। মুজিবের স্ত্রী আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন।"

এই মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়া উচিত হয় নি ভদ্রমহিলার। আবারও বলছি সাংস্কৃতিক ভিন্নতা এবং নিজের অজ্ঞতাকে ঢাকবার জন্য অনেক কিছুই লিখে ফেলা যায়। এটা কখনই আসলে শোভন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে না।

মুজিব ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন তার সহায় সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি দেখে আসবার জন্য সাংবাদিকদের হেলিকক্পটারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন এইসব বিদ্বেষের জন্য আসলে কাকে দোষারোপ করা যায়। নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে কঠোর সাংবাদিকতা করা যায় হয়তো, তবে আমার কাছে ফালুচ্চিকে কেকেকে র মতোই বর্ণবাদী লাগলো সেখানে কালো মানুষদের অধম ভেবে তাদের নিধনের কাজটাতে সবারই সায় ছিলো আর এখানে তৃতীয় বিশ্বে এবং এর পরিবর্তনে স্বাধীকারবাদী নেতৃত্বদের হেয় করবার প্রচেষ্টা লক্ষণীয় উপাদান।
২৭. ০৩ রা মে, ২০০৮ সকাল ৯:৫৫
comment by: মাহমুদ রহমান বলেছেন: বাপরে!......খুব সাংঘাতিক মহিলার ফাঁদে পড়েছিলেন শেখ মুজিব। শেখ মুজিবের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর একটা অভিজ্ঞতা।

......ইন্টারকন্টিনেন্টালের সর্বোচ্চ তলায় তখন ভুট্টোর ভূমিকা ছিল নিরোর মতো। নগরী যখন জ্বলছিল এবং এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ চলছিল, ভুট্টো তখন মদপান করছিলেন আর হাসছিলেন। পরদিন সকাল ৭টায় তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। আমি দেখেছি, যারা এক সময় পাকিস্তানিদের ভয়ে ভীত ছিল, তারা এখন মুজিবকেই ভয় করে।........

এদেশের মানুষকে লাল সালাম যারা কোন ষড়যন্ত্রকারীকেই এদেশে দম্ভ করে টিকতে দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবেনা ইনশা আল্লাহ।
২৮. ১৩ ই মে, ২০০৮ রাত ১১:১৯
comment by: স্বাধীন বাংলা বলেছেন: প্লাস ও প্রিয়তে যোগ
২৯. ১৬ ই মে, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৪
comment by: বৃত্ত বলেছেন: এই হল সাংবাদিকতা, আর সাংবাদিক।
সাংবাদিকরাই একমাত্র বুঝতে পারবেন, এগুলো মোহ কতটা বেশি।
জীবনের চেয়েও বেশি।
৩০. ১৪ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ৮:৩০
comment by: উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: খুব মন দিয়ে পড়লাম সাক্ষাৎকারট। পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। শেখ মুজিবকে এভাবে নাকানি চুবানি খাইয়েছিলেন ফালাচি!!!

অথচ ক্লিনটনকে কেঊ কখনও পর্যুদস্ত করতে পারে নি। কি ঠান্ডা মাথায় চমৎকার ভাবে ইন্টারভিউ দেন!!! কোন ইন্টারভিউতেই ক্লিনটনকে কেউ বিব্রত করতে পারে নি।

No comments:

Post a Comment