Sunday, March 1, 2009

চে গুয়েভারা : শুধু আইকন নাকি একটা মতবাদ?

১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:৪১
শেয়ার করুন: [Add to digg] [Add to FURL] [Add to blinklist] [Add to reddit] [Add to Technorati] [Add to YahooMyWeb] [Add to Co.mments] [Add to NewsVine] Facebook [new feature]

ধরা যাক, আমার ঘরে মার্কস বা অ্যাঙ্গেলসের ছবি টাঙানো আছে। অথবা ধরা যাক, লেনিন, স্ট্যালিন বা মাও সে তুং আছে। কী মানে তৈরি হয়?
অথবা ধরা যাক আমার ঘরে বলিভিয়ার জঙ্গলে ঘোরা চে, ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে চে অথবা চে'র যে কোনো ছবি টাঙানো আছে। এর মানেই বা কী তৈরি হয়?
কেউ ঘরে লেনিন, মাও বা মার্কসের ছবি টাঙানোর চেষ্টা করেছেন কি না জানি না। মনে মতো একটা পোস্টার সাইজ ছবি পেতে এই ঢাকা শহরে আপনাকে ঘেমে যেতে হবে। যদি না আজিজ মার্কেটের রবিন আহসান সম্প্রতি এদের কোনো পোস্টার না ছেপে থাকে। কিন্তু চের ছবি খুঁজুন। আপনি আমেরিকায় থাকেন, আর ব্রিটেনে, ঢাকা কি বরিশালে চে'র ছবি সহজেই পাবেন। সে ছবি অনায়াসে বাঁধিয়ে ঘরের দেয়ালে এঁটে দিতে পারেন।
ধরা যাক, আপনার বাড়ি কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ বা রাজশাহী। আপনার দেয়ালে চে'র ছবি। কেউ কোনো সন্দেহ করবে? আপনি যে মতবাদে বিশ্বাসী তা নিয়ে কারো মনে কোনো সন্দেহ তৈরি হবে? কেউ আপনার দ্বারা আক্রন্ত বোধ করবে? উত্তর না বাচক হবে বলেই আমার ধারণা। কিন্তু দেয়ালে মাও সে তুংয়ের ছবি টাঙিয়ে দেখুন। আপনি নিমেষে কত মানুষের সন্দেহ, ভীতি আর বিরোধিতার মুখে পড়েছেন।
কারো ছবি টাঙানোর অর্থ তাহলে তৈরি হয়? ঘরে ঘরে, দেয়ালে দেয়ালে রাজনীতি চলে। মণীষা কৈরালা, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ঐশ্বরিয়া রাই, কার্ল মার্কস, অনুকুল ঠাকুর, লেনিন, মাও সে তুং, চে গুয়েভারা যাকেই বেছে নেন। একটা অর্থ তৈরি হবে। সেটা কী?
চে গুয়েভারার জন্মদিন উপলক্ষে ব্লগে বেশ কয়েকটি পোস্ট হয়েছে। পারভেজ চৌধুরী পাঁচ বা ততোধিক পোস্ট দিয়েছেন। সুন্দর একটি লেখা দিয়েছেন ফারহান দাউদ। লেখাগুলো আমাকে একটা ভাবনায় ফেলে দিলো। দেখলাম, ব্লগে যেখানে মার্কসবাদের বিরোধিতা খুব চালু ব্যাপার সেখানে চে'কে নিয়ে এতো লেখা কারো বিরক্তি বা বিরোধিতা তৈরি করতে পারলো না। তাহলে বিপ্লবী চে'র ইমেজ বিপ্লবের বদলে আমাদের সামনে অন্য কোনো ইমেজে হাজির হয়েছেন? তিনি কি এখন যথেষ্ট বিপ্লবী নন? প্রতিক্রিয়াশীলদের ঘাটানোর যথেষ্ট ক্ষমতা তার নেই?
আজিজ মার্কেটে হোসিয়ারি শিল্প বিকাশের সুফল হিসাবে চে'র ছবি কত সহজেই না আমাদের বুকে পিঠে ঠাঁই করে নিয়েছে। কোর্ট পিন সহ নানা সুভ্যেনিরে চে ভাল আইটেম। চে ক্যাপ, চে ক্যাফে, চে শার্ট, চে পাইপ। কত কিছু। মার্কিন সমাজে যেখানে মার্কসবাদ মোটামুটি নিষিদ্ধ, কিউবা শত্রু দেশ, ফিদেল শত্রু ব্যক্তি সেখানেও চে তরুণদের মধ্যে বড় আইকন। সমাজের কর্তারা চে ইমেজ নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত কি না বোঝা যায় না। কিন্তু মাও সে তুং বা লেনিন চে'র জায়গা নিয়ে কী হতো? একটু ভাবা দরকার।
আমি কি কোথাও ভুল করছি? যে প্রাকটিসিং মার্কসিস্ট। লাতিন আমেরিকার জনগণের আন্দোলনে তার বড় ভূমিকা। চে'র প্রথম জীবনের মোটর সাইকেল ডায়েরিজ আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছিল। বীরত্ব, সাহস আর কষ্টে একাকার হয়ে তার শেষ জীবন আমাকে গভীরভাবে তাড়িত করেছিল। চে' যতদিন দিন বেঁচেছিলেন ততোদিন সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের দালালদের শত্রু ছিলেন। তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত শত্রুরা থামেনি। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তিনি শেষদিন পর্যন্ত সোচ্চার ছিলেন। তাহলে, এখন সাম্রাজ্যবাদ তাকে নিয়ে ভীত নয় কেন?
চে কি একজন সক্রিয় মার্কসবাদী নাকি একটি মতবাদের প্রবক্তা?
চে কি বাস্তবতাবাদী বিপ্লবী প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে নাকি রোমান্টিসিস্ট করে তোলে?
চে কি নির্বিবাদী মার্কসিস্ট ইমেজ তৈরি করে?
চের ইমেজ কি সাম্রাজ্যবাদীরা নতুন করে তৈরি করেছে?
চে কেন মার্কস-বিরোধীদের মধ্যেও সমান জনপ্রিয়?
চে কে ভালোবাসতে কি মতবাদ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না?
চে কি একটা স্টাইল?
চে কে তাহলে?



প্রকাশ করা হয়েছে: পঞ্চতন্ত্র বিভাগে ।



* ৬৯ টি মন্তব্য
* ৬৩৩ বার পঠিত,

Send to your friend Print
রেটিং দিতে লগ ইন করুন
পোস্টটি ১০ জনের ভাল লেগেছে, ৪ জনের ভাল লাগেনি


এই লেখার লিংক টি আপনার বন্ধুকে পাঠান বন্ধ করুন





এই লেখার লিংক টি আপনার বন্ধুকে পাঠান বন্ধ করুন

আপনার নিজস্ব ই-মেইল ক্লায়েন্ট ব্যবহার করতে চাইলে এখানেক্লিক করুন

আপনার নাম :

আপনার ই-মেইল

আপনার বন্ধুদের ইমেইল

মেসেজ (নীচের মেসেজটি আপনার ইচ্ছেমত পরিবর্তন করুন
hi, i have been reading a nice wonderful post in http://www.somewhereinblog.net and would like to share it with you. Here is the post link http://www.somewhereinblog.net/blog/mahbubmoreblog/28809821 , please visit the link and rate it if you like. :-)

নিজেকেও একটি কপি পাঠান



১. ১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:৪৭
comment by: মৈথুনানন্দ বলেছেন: পল্সায়ন্সের স্চ্যুডেন্টদের মোটামুটি কাছের মানুষ - পরীক্ষাপ্রাতে স্মরণীয়! :P
১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:৫০

লেখক বলেছেন: তাই নাকি? পল সায়েন্সে চে পড়ায়?
২. ১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৬
comment by: হ্যারি সেলডন বলেছেন: গুয়ে ভরা? ছিঃ ছিঃ, গু-মুত নিয়ে এভাবে কথা বলা ঠিক না। ব্লগটা দিনদিন কি যে হয়ে যাচ্ছে, গু-মুত নিয়েও লোকজন পোস্টাচ্ছে।
১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:১৪

লেখক বলেছেন: মানে কী?
৩. ১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৮
comment by: মৈথুনানন্দ বলেছেন: মানে? আমাদের এখানে সিরিয়স্লিই সেলেবসে আছে, আমার ক্ল্যাস্মেট ভর্তি হয়েছিল এক কালে, তার বই দেখে জানতে পারি।
১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:১৫

লেখক বলেছেন: চে'র কোন লেখা পড়ায়?
৪. ১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:০১
comment by: হ্যারি সেলডন বলেছেন: মা.মো. আগের কমেন্টটা মুছে দেন। চে'কে নিয়ে এরকম জোকস ঠিক না, উচিৎ না।
১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:১৬

লেখক বলেছেন: কমেন্টটা থাকুক। সঙ্গে আপনার অনুতাপটাও।
৫. ১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:১৬
comment by: সোমেশ্বর অলি বলেছেন: হ্যারি সেলডন, বোধোদয় হইছে?
১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:১৯

লেখক বলেছেন: বোধের উদয়= বোধোদয়।
৬. ১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:২১
comment by: নিসর্গ পথিক বলেছেন: চে...
১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:৩০

লেখক বলেছেন: কী?
৭. ১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:৩১
comment by: মৈথুনানন্দ বলেছেন: হামকো পতা নেই মামোজি। আমি অন্য লায়নের ছেলে। শুধু এটুকু বলতে চেয়েছি যে পল্সায়ন্সে ওয়র্লড-পলেটেক্স সশ্যাল-সায়ন্সের নানা জিনিসের সাথে চের শর্ট বায়ো পড়ানো হয় মার্ক্স-এঙ্গেইল্স-ক্যাস্ট্র ইত্যাদির সঙ্গে। তাই পরীক্ষার আগে ছেলেমেয়েদের ওকে মনে পড়ে! :)
১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:৩৬

লেখক বলেছেন: সমঝগায়া। আপকো মেরি তরফছে বহুত বহুত ধন্যাবাদ। মেয় ভি আলাগ লাইনকা। সেইজন্যই বুঝনেকো কোশেশ করা।
৮. ১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৫
comment by: মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন: এতগুলা প্রশ্ন জিগাইলাম একটারও উত্তর পাইলাম না।
৯. ১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:৫০
comment by: ফারহান দাউদ বলেছেন: "আজিজ মার্কেটে হোসিয়ারি শিল্প বিকাশের সুফল হিসাবে চে'র ছবি কত সহজেই না আমাদের বুকে পিঠে ঠাঁই করে নিয়েছে। কোর্ট পিন সহ নানা সুভ্যেনিরে চে ভাল আইটেম। চে ক্যাপ, চে ক্যাফে, চে শার্ট, চে পাইপ।চের ইমেজ কি সাম্রাজ্যবাদীরা নতুন করে তৈরি করেছে?
চে কেন মার্কস-বিরোধীদের মধ্যেও সমান জনপ্রিয়?
চে কে ভালোবাসতে কি মতবাদ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না?
চে কি একটা স্টাইল?"

মাহবুব ভাই,প্রশ্গুলা জাগসিল,আমি লেখার মাঝে সেটা বলছিও,আরেকবার এইখানে তুইলা দিলাম।

"নতুনযুগে নতুনভাবে উপনিবেশ গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে লাভের হিসাব মেলাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীরা। চে এখন ব্যবসার সামগ্রী,তাঁকে নিয়ে লেখা হয় হাজার হাজার লেখা,তাঁর ছবি আঁকা টিশার্ট মগ পোস্টার বিক্রি করে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে তাঁরই হত্যাকারীরা,আধুনিক ফ্যাশনসচেতন
তরুণ বয়সের ট্রেন্ড হিসেবে বুকে চে'র ছবি আঁকা টিশার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়,অবসরের বিলাসিতা হিসেবে সুদর্শন চে'র ছবি টানিয়ে রাখে ঘরের দেয়ালে,কিন্তু ক'জন তার হৃদয়ে টানিয়ে রাখে চে গুয়েভারার প্রতিকৃতি?"
১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৫:০৪

লেখক বলেছেন: প্রশ্ন তো আমারও। কিন্তু কেন সাম্রাজ্যবাদীরা এটা করে? চে কি যথেষ্ট বিপ্লবী নন?
১০. ১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৬
comment by: মানুষ বলেছেন: বেঁচে থাকতে চে যাই থাকুক মরে গিয়ে ব্যাবসার সামগ্রী হয়ে গেছে।
১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৫:০৬

লেখক বলেছেন: কিন্তু কেন?
মাও, লেনিন, ক্যাস্ট্রোকে নিয়ে তো এমন হয় নাই।
১১. ১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৫:০৩
comment by: আজহার ফরহাদ বলেছেন: পুঁজি বাজারে চে এখন একটি পণ্য। বিক্রয় এবং খরিদযোগ্য।

মতাদর্শিক তর্কে না গিয়েই মানুষ চে নিয়ে অনেক বেশি মগ্ন তার ভাবমূর্তিতে। যেখানে অনেকেই জানে না চে কোথায় কখন কীভাবে চে হয়েছিলেন।

সম্ভবত দুনিয়ার সবচেয়ে সচল ব্র্যান্ড- আন্ডারওয়্যার থেকে প্যারাস্যুট পর্যন্ত ।
১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৫:০৮

লেখক বলেছেন: চে'র নামে তাহলে বিপ্লব বাহিত হয় না? আমি বুঝতে পারতেছি না। অবাক লাগে।
১২. ১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৫:০৫
comment by: মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন: ফারহান দাউদের পোস্টের লিঙ্ক :
Click This Link
১৩. ১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৫:০৫
comment by: আজহার ফরহাদ বলেছেন: প্লাস দিসি এক্টা।
১৫ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৫:০৯

লেখক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
১৪. ১৫ ই জুন, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২৩
comment by: সুজনবাঙালী বলেছেন: পঞ্চম যোগটা আমিই প্রদান করিলাম।

কারন আপনি সফল হইয়াছেন। প্রথম আলোর মতো এখন দেখছি আপনিও গুরুত্বপুর্ন ইসুতে হেজিমনি তৈরি করতে পারেন!

ধন্যবাদ মাহবুব ভাই ধন্যবাদ!
১৬ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:১৪

লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ।
অনেক দিন পর হেজিমনি শব্দটা শুনলাম। ছাত্রজীবনের কথা মনে পইড়া গেল।
১৫. ১৫ ই জুন, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০৫
comment by: প্রবাস কন্ঠ বলেছেন: @মাহবুব মোর্শেদ ভাই, চে'র জীবনী'র কোনো লিংক থাকলে pls দিবেন ?
১৬ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:১৫

লেখক বলেছেন: উইকিপিডিয়া কি আমাদের অলস করে তুলছে?
http://en.wikipedia.org/wiki/Che_Guevara
১৬. ১৫ ই জুন, ২০০৮ রাত ১০:২৫
comment by: পি মুন্সী বলেছেন: ঠিক সময়ে প্রশ্ন তুলতে পারাটা খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ কাজ। প্রশ্নগুলো আপনি তুলতে পেরেছেন এজন্য খুশি লাগছে। অবজারভেশন গুণটা প্রশংসনীয়।

বিপ্লবের দুটো মানে আমরা বিপ্লবীদের মধ্যে হতে দেখি। একটা হলো রাজনৈতিক ক্ষমতা তৈরীর দিক থেকে আর একটা রাজনৈতিক কর্মসূচী বা অর্থশাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা , ন্যায্যতা ইত্যাদি - এককথায় মতাদর্শগত দাঁড়ানোর দিক থেকে বিপ্লবী দক্ষ কর্মী। এটা গেল বিপ্লবী দক্ষ কর্মীদের দিক থেকে বিচার।
তবে কর্মী নয়, বিপ্লবী পার্টির কাজের ধরণের দিক থেকে হবে এর সঠিক বিচার। পাল্টা বলপ্রয়োগের ক্ষমতা অর্জন থেকে না মতাদর্শিক (ideological) ক্ষমতা অর্জন থেকে কোনটাকে মুখ্য করে বিপ্লবী পার্টি তৎপরতা শুরু করছে - এই ভিত্তিতেই দুটো পথ বা ধারা আমরা হতে দেখি। দুই ধারাই উপলব্দি করে দুটো কাজই সমান দরকারী। কারণ, যুক্তিতর্কে (rationality) দিয়ে জিতে কতক সুবিধা নেয়া, আগানো গেলেও শেষবিচারে, পাল্টা বলপ্রয়োগের ক্ষমতা ছাড়া কিছুই সম্ভব না, নতুন ধরণের ক্ষমতাও তৈরী হবে না - এটা উভয়েই বুঝে। কে কোন ধারাকে মুখ্য মেনে ভারকেন্দ্র কোথায় বসিয়ে যাত্রা শুরু করবে - এটা স্ব স্ব দেশের বাস্তব পরিস্হিতির বিচারের উপর নির্ভরশীল মনে করে। কোন পথের কেউ কাউকে নাকচ করে না।
যা বললাম তার একটু উদাহরণ দিব এবার। মোটা দাগে মাও প্রথম ধারার আর লেনিনের দ্বিতীয় ধারার বিপ্লবের উদাহরণ তৈরী করেছেন। কিউবার বিপ্লব বা ল্যাটিন আমেরিকার অন্য নানান দেশে বিপ্লবের উদ্যোগগুলো সবসময়ই প্রথম ধারার অন্তর্গত বলে দেখা গেছে। সদ্য ঘটা নেপালে ওটা বিপ্লবের ধরণে মাওবাদ আবার দলের নামেও। "গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরাও" - অর্থাৎ গ্রামে জনগণের পাল্টা ক্ষমতা তৈরী করে শহরে জেঁকেবসে থাকা আসীন নিপীড়ক ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ ও পরাস্ত করা - মাওয়ের বিপ্লবকে এভাবে তত্ত্বায়িত করা হয়। কিউবা বা ল্যাটিন আমেরিকার ঘটনা ওভাবে মাওয়ের গ্রাম-শহর বলে মিলে না তাসত্ত্বেও সশস্ত্র পাল্টা বলপ্রয়োগের ক্ষমতা অর্জন এটাকে মুখ্য করার দিক থেকে মিল আছে। মূল বিষয়টা হলো কোথায় পাল্টা বলপ্রয়োগের ক্ষমতা অর্জন করা ঘাটি গাঁড়া যুদ্ধকৌশলের দিক থেকে সহজ সুবিধাজনক। পাহাড়, বনজঙ্গল, নদী -এককথায় গম্যতা এই ভুগোল বিচারও তাই ওখানে মুখ্য। আবার '৭১ সালে জনগণের মধ্যে মিশে থেকে পাল্টা আক্রমণ করে ক্ষমতার ভিত কাঁপিয়ে জনগণের সমর্থনের ক্ষমতা তৈরী করার উদাহরণ আমাদের রেখেছি।
আবার মতাদর্শিক (ideological) ক্ষমতা অর্জন মুখ্য করে আগানোর ধারার মধ্যে প্রকাশ্য ও গণআন্দোলনের রূপে বিপ্লবী রাজনীতির আত্মপ্রকাশ আমরা লক্ষ্য করে থাকি। তবে প্রকাশ্য ও গণআন্দোলন আইনিভাবে বা বলপ্রয়োগে দমন যদি করে তবে সশস্ত্র পাল্টা বলপ্রয়োগের ক্ষমতা আকারেই পার্টিটা গড়ে উঠতে বাধ্য হয়।

এখন মুল প্রসঙ্গে আসি। বিপ্লবের কায়কারবারে মতাদর্শিক ক্ষমতার চেয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা বা পাল্টা বলপ্রয়োগের ক্ষমতা অর্জনের ধারার মধ্যেই একমাত্র রোমান্টিক হওয়ার কিছু সুযোগ আছে। অস্ত্র হাতে বিপ্লবের সৈনিকের নিজের জীবন বিলিয়ে দেবার মধ্যে একধরণের রোমান্টিকতা তো অবশ্যই আছে।
কর্পোরেট কোম্পানীর চাকরি ভালো বেতন, ভালবাসার সাথীকে নিয়ে ঘরবাঁধা, প্রেমকে সার্থক করা একটা সাজানো ড্রয়িং রুমের স্বপ্ন সব তরুণেরই হয়। আবার একটা মনপীড়া, অকর্মন্নতাও কোথা যেন তাড়া করে ফিরে। এসবের মিলিত ফলাফল হলো, চে এর একটা ছবি টাঙানো বা বুকে ঝুলিয়ে ঘুরা। আসলে যে যা তাই সে প্রকাশ করছে। বড়জোড় বিপ্লবের রোমান্টিক দিকটাই তার পছন্দ। আবার এখনকার কালে এটা নিরাপদও, কোন ঝামেলা নাই, নিরুপদ্রব।

ঝামেলা মানে? পুঁজির দুনিয়া সম্পর্কের মধ্যে যে জীবন তৈরী করছে এর কাছে কমউনিষ্ট বিপ্লব আর তেমন কোন হুমকি বা লড়াকু (radical) কিছু নয়। পুঁজির চোখে যেগুলো বিশেষণ আগে কমিউনিষ্টদের প্রাপ্য ছিল। তখন চে এর একটা ছবি ঝুলানো অবশ্যই ঝামেলা ছিল। এখন সেই (radical) এর মানে এখন জঙ্গী, টেররিষ্ট, সন্ত্রাসী বলে অন্য কেউ। চে এখন তাই কেবল তাঁর জামার মত নিরুপ্রদ্রব রোমান্টিকতার প্রতীক। এর সাথে জামার ভিতরের চে এর জীবন রাজনীতির কোন সম্পর্ক নাই।

নাহ্‌, সবটা বোধ হয় ঠিক বললাম না। চে কী ছিল তা নির্ভর করে আসলে আমরা কে কীভাবে নিব, আমার কী দরকারে লাগে এর উপর। ২০০৩ সালের ইরাক হামলার আগে ও পরের ঘটনা। আরবস্যাট স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল নিয়মিত দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করতাম অন্তত: দুটো একটা দুবাই-ভিত্তিক অন্যটা ইজিপ্ট-ভিত্তিক চ্যানেল নিয়মিত বা পুন:প্রচারে চে এর জীবনী নিয়ে ডকুমেন্টরী প্রচার করছে। ওখানে কিছু লাইভ ফুটেজও দেখা যতো, যে গ্রামে যে ঘরে থেকে তাকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল সেই অটুট ঘর, তার আশ্রয়দাত্রী বয়স্ক নারীর সাক্ষাৎকার সব আছে ওখানে। এরসাথে ঐসব চ্যানেলে মিসরের গামেল আব্দুল নাসেরের বৃটিশ উপনিবেশ বিরোধী নানান ডকুমেন্টরীও দেখানো হতো।
মূল কথাটা হলো, চে এর পাল্টা সশস্ত্র বলপ্রয়োগে জনগণের ক্ষমতা তৈরী, গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অভিজ্ঞতা যাদেরই প্রয়োজন তাদের মাঝেই আসল চে বেঁচে থাকছেন। এই ফাকে বলে রাখি। জাসদ সংশ্লিষ্ট সিরাজুল আলম খান '৭১ এর আগে ও পরে তাঁর বিশেষ লড়াকু কর্মীদের কোন লাল বই নয় পড়তে দিতেন সামরিক রণকৌশল সংক্রান্ত বই। একটা বই সম্ভবত ডেবরে (Debre) এর, খুবই জনপ্রিয় ছিল।
পরাশক্তির "সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ" মধ্যপ্রাচ্যকে লড়াকু (radical) হতে বাধ্য করছে। ফলে যার পেটের জ্বালা সে ইসলামিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কমিউনিষ্ট চে তাঁর কাছে বেঁচে উঠছে, গুরুত্ত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

দেখা যাচ্ছে, চে এর ইমেজ সাম্রাজ্যবাদ আমাদের মত "আধুনিক" দেশে বা পশ্চিমে রোমান্টিক ভাবে দাঁড় করাতে পারলেও মধ্যপ্রাচ্যে শুধু লড়াকু (radical) ভাবনার কাছে নয়, বাদশাদের দেশে যখন চে জাতীয় টিভিতে জায়গা করে নেয় তখন এর তাৎপর্য অনেক গভীর। সন্দেহের অবকাশ নাই।
আপনার প্রশ্ন: চে কেন মার্কস-বিরোধীদের মধ্যেও সমান জনপ্রিয়?
চে কে ভালোবাসতে কি মতবাদ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না? চে কি একটা স্টাইল?

পুঁজির বিরুদ্ধে, পরাশক্তির বিরুদ্ধে যেকোন লড়াকু (radical) রাজনীতি (তা সে আপাতভাবে ইসলাম ডাকনাম নিয়ে হাজির হলেও) যতক্ষণ সে লড়াকু (radical) চরিত্রে হাজির থাকবে ততক্ষণ চে কমিউনিষ্ট পরিচয় ছাপিয়ে তাঁর কাছে গ্রহনীয় হবে। কারণ, লড়াকু (radical) রাজনীতির তাঁকে দরকার। চে কে ভালোবাসতে গেলে তাই দেখা যাচ্ছে মতবাদ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না। এই অর্থ এটা একটা স্টাইলও বটে। আমি এভাবেই দেখি।
১৬ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:২০

লেখক বলেছেন: আপনার মন্তব্য চিন্তা ও আলোচনাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য যথেষ্ট। সত্যি বলতে আপনার সঙ্গে আমার দ্বিমত সামান্য। তবু কিছু কথা বলবো। একটু সময় নিয়ে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
১৭. ১৫ ই জুন, ২০০৮ রাত ১০:৫৮
comment by: রিয়াজ শাহেদ বলেছেন: চের ইমেজ সাম্রাজ্যবাদীরা নতুন করে তৈরি করেছে মাহবুব ভাই; উত্তরাধুনিকতার এই কালে যেখানে আমরা সবাই যাপন করছি একধরনের "ডিজুস" জীবন, সেখানে চে-র ইমেজ নতুন করে তৈরি করা কঠিন কিছু নয়; চে-র বিমূর্ত ছবি আঁকা টিশার্ট গায়ে দিয়ে আমরা পুলক অনুভব করি, সাম্যবাদের প্রতি আমাদের পবিত্র দায়িত্ব পালন করি।

প্রশ্ন করতে পারেন আপনি, এতোজন থাকতে চে কেনো, কেনো মাও সে তুং বা ক্যাস্ট্রো বা লেনিন বা কার্ল মার্ক্স নন? সম্ভবত সাম্রাজ্যবাদীরা এদের মধ্যে চে কে ভয় করে সবচেয়ে বেশি, যেহেতু সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারে এই মানুষটার কাছ থেকে বাধা পেয়েছে তারা সবচেয়ে বেশি; চে গুয়েভারা নামটি শুনলেই তারা কেঁপে ওঠে; তবে তারা নির্বোধ নয়, নির্বোধ হলে সাম্রাজ্যবাদ বিস্তার করা যায়না; তারা উত্তরাধুনিকতার দর্শনটিকে ভিত্তি করে চে গুয়েভারার ইমেজ নতুন করে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
১৬ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:২২

লেখক বলেছেন: সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদীদের তৈরি করা চে আর অরিজিনাল চে'র মধ্যে পার্থক্য করবো কীভাবে?
১৮. ১৫ ই জুন, ২০০৮ রাত ১১:২০
comment by: ফারহান দাউদ বলেছেন: সাম্রাজ্যবাদি কন আর পুঁজিবাদী কন,ওরা নিজের মা'রে লয়াও ব্যবসা করে,কাজেই শত্রুরে লয়া করতে দোষ কি? জীবিত চে ১টা হুমকি ছিলেন,মৃত চে'র কথা মানুষকে ভুলাইতে না পাইরা তাঁর ইমেজটাই নতুন কইরা বানায়া নিজেদের লাভের পাল্লা ভারি করলো আরকি। দায় আমাদেরো থাকে,আমরা আদর্শপূজার চেয়ে ব্যক্তিপূজায় বিশ্বাসী,আওয়ামী লীগ বিএনপি'র আদর্শ কি তার চেয়ে মুজিব জিয়া আমাদের কাছে বড়,দুনিয়ার সবখানেই এই জেস। এইখানেই চে ব্যবসার উপকরণ হয়া যায়,সিনেমার নায়কের মত চেহারা হওয়াতে নারীকুল আর পুরুষকুল ২ দিকেই বাড়তি ফেভার আসে তার ছবি টানানোতে,এইদিকে বোহেমিয়ান ঘুরাঘুরি নিয়াও ১টা সিনেমাটিক ব্যাপার আসে,মাও তো ঐভাবে ঘুরেন নাই,ক্যাস্ট্রোর চেহারাও ঠিক আকর্ষনীয় না। একটা ব্যাপার হইল,আমরা বীরত্বের সিনেমা দেখতে পছন্দ করি,বন্দুকযুদ্ধ দেইখা আমোদ পাই কিন্তু আমাদের রণাঙ্গনে পাঠাইতে চাইলে বউ-বাচ্চার কথা মনে পড়ে,ব্লগেও এমন পাবলিক কিন্তু কম পাইবেন না:)
১৬ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:২৪

লেখক বলেছেন: চমৎকার। কোট করার মতো কথা।
১৯. ১৬ ই জুন, ২০০৮ রাত ১২:০০
comment by: রিয়াজ শাহেদ বলেছেন: ফারহান দাউদের মন্তব্যটি প্রবাদতুল্য।
১৬ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:২৬

লেখক বলেছেন: আসলেই।
২০. ১৬ ই জুন, ২০০৮ রাত ১২:১০
comment by: ব্রাত্যজন বলেছেন: যে কোন অর্জনকে এক কথায় সাম্রাজ্যবাদীদের কূটচাল হিসাবে দেখেন কেন? তাহলে কি ঐ অর্জনের নিজস্ব কোন শক্তি নেই ?
১৬ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:২৯

লেখক বলেছেন: প্রথম কথা হইলো 'যে কোনো অর্জনকে' সাম্রাজ্যবাদীদের কূটচাল হিসাবে দেখার কারণ নাই। সেটা করাও হয় নাই। কিন্তু যেখানে ঘাপলা থাকতে পারে সেখানে একটু গভীরভাবে দৃষ্টি ফেলবো না কেন?
চে ইমেজের নিজস্ব শক্তিটা কেমন?
২১. ১৬ ই জুন, ২০০৮ ভোর ৬:২৬
comment by: ত্রিভুজ বলেছেন:

চে'র জনপ্রিয়তার পেছনের কারণটা সম্ভবত অন্যকোথাও.. যেমন আমিও চে'র ভক্ত! : )


১৬ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:৩৩

লেখক বলেছেন: কেউ চে'র ভক্ত না এইটাই অস্বাভাবিক ব্যাপার। আর সেইখানেই আমাদের প্রশ্ন।
আপনার কেন চে'কে ভালো লাগে?
২২. ১৬ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:৩১
comment by: হ্যারি সেলডন বলেছেন: এ কি শুনলাম!!! ত্রিভুজ নাকি চে'র ভক্ত!!!!!!!
১৬ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:৩৪

লেখক বলেছেন: তাতে আপনের সমস্যা আছে?
বলেন, ত্রিভুজ কেন চে'র ভক্ত হতে পারবে না?
২৩. ১৬ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:৪৮
comment by: হ্যারি সেলডন বলেছেন: কেন ভক্ত হতে পারবেনা সেটা বললে আপনি আবার মাইন্ড খাইয়া আমারে ব্লক করবেন না তো?
১৬ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:৩২

লেখক বলেছেন: প্রচলিত ভাষায় বলতে পারবেন না?
২৪. ১৬ ই জুন, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:১৯
comment by: রহমান মাসুদ বলেছেন: চে একটি চেতনার নাম। চে একটি অনুভূতির নামান্তর। চে একটি সমৃদ্ধ পৃথিবীর সূচনা মুহুর্ত মাত্র...
১৬ ই জুন, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২৭

লেখক বলেছেন: তা তো বটেই। তারপরই তো প্রশ্নগুলা।
২৫. ১৬ ই জুন, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৩২
comment by: সুরিজত স্বপন বলেছেন: মানুষ এখন ভিতরে বিপ্লবী আর বাইরে নুয়ে হাঁটা ক্যুজ মানুষ
১৭ ই জুন, ২০০৮ সকাল ১১:১৬

লেখক বলেছেন: একেবারে খাঁটি কথা। ভিতরে বিপ্লবী পোষাও তো ভীষণ শান্তির কথা।
২৬. ১৬ ই জুন, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩
comment by: ত্রিভুজ বলেছেন:

@হ্যারি সেলডন
চে'র ভক্ত হলে সমস্যা কোথায়? চে'র ভক্ত হওয়া মানে তার মতবাদের ভক্ত হওয়া নয়। এই সিম্পল সমীকরণটা বুঝলেই ভাল। চে গুয়েভারা বিষয়ে আরো পড়ুন.. জানুন... আপনিও ভক্ত হয়ে যাবেন। একটা সময়ে চে থেকে আমি অনেক প্রেরনা পেয়েছি.. এখনো পাই। একজন মানুষের নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে হলে তার চে সম্পর্কে জানা উচিত।


১৭ ই জুন, ২০০৮ সকাল ১১:১৮

লেখক বলেছেন: ত্রিভুজ,
হ্যারি সেলডনকে বলা কথাগুলা পড়ে নিলাম। কিন্তু আপনার কেন চে'কে পছন্দ তা নিয়ে আলাদা পোস্ট বা কমেন্ট আশা করি। একটু বিস্তারিত।
২৭. ১৭ ই জুন, ২০০৮ রাত ১২:২৮
comment by: ব্রাত্যজন বলেছেন: মাহবুব মোর্শেদ
*চে কি একজন সক্রিয় মার্কসবাদী নাকি একটি মতবাদের প্রবক্তা?
এ প্রশ্নটা পরিষ্কার নয়। এটা শুধু শুধু জটিল করার কারনে জটিল করেছেন। আপনার পুরা লেখাটা আপনি আপনার অবস্থানে সঠিক এ অবস্থান (কিন্তু অন্যদের কাছে ঘোলাটে) থেকে লিখেছেন। আগে নিজেকে পরিষ্কার করতে চেষ্টা করুন।
*চে কি বাস্তবতাবাদী বিপ্লবী প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে নাকি রোমান্টিসিস্ট করে তোলে?
চে গুয়েভারা রোমান্টিসিস্ট এটা কিন্তু চে বিরোধী, বিপ্লব বিরোধী দের সুচতুর তাত্বিক বিশ্লেষন। এটা আপনার বানানো নয় কোথাও থেকে
পড়ে বা শুনে এখানে মেরে দিয়েছেন। চে নিজেও স্বীকার করে গেছেন.... যারা আমাকে দুঃসাহসী রোমান্চসন্ধানী বলেন তারা খুব ভুল বলেন না কিন্তু আমি হলাম সেই রকম দুঃসাহসী যে তার আর্দশের বিজয়ের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারে ।
*চে কি নির্বিবাদী মার্কসিস্ট ইমেজ তৈরি করে?
এ প্রশ্নের উত্তর খুজতে হলে নেতা, তাত্বিক এসব নিয়ে একটু পড়াশুনা করতে হবে।
*চের ইমেজ কি সাম্রাজ্যবাদীরা নতুন করে তৈরি করেছে?
কোন অর্জনকে এক কথায় সাম্রাজ্যবাদীদের কূটচাল হিসাবে দেখেন কেন? তাহলে কি ঐ অর্জনের নিজস্ব কোন শক্তি নেই ? চে এর শক্তি কি? চে এর প্রতিকৃতিতে শুধুমাত্র চে কে খুজেন কেন ? সেখানে কি মাকর্স-এঙ্গেলস নেই ? মাও-লেনিন নেই? ক্যাস্ট্রো কিংবা হো চি মিন নেই ?
* চে কেন মার্কস-বিরোধীদের মধ্যেও সমান জনপ্রিয়?
একজন মাকর্সবাদী কি মাকর্স এর বিরোধীতা করতে পারেনা ?
* চে কে ভালোবাসতে কি মতবাদ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না?
না । তার ব্যাক্তি ইমেজ থাকতেই পারে।
* চে কি একটা স্টাইল?
হ্যা । হতে পারে।
*চে কে তাহলে?
চে হচ্ছেন রাষ্ট্রহীন এক আর্ন্তজাতিক অসম্ভবের স্বপ্ন দেখা বাস্তববাদী বিপ্লবী।
আপনি বলেছেন, ব্লগে যেখানে মার্কসবাদের বিরোধিতা খুব চালু ব্যাপার সেখানে চে'কে নিয়ে এতো লেখা কারো বিরক্তি বা বিরোধিতা তৈরি করতে পারলো না। তাহলে বিপ্লবী চে'র ইমেজ বিপ্লবের বদলে আমাদের সামনে অন্য কোনো ইমেজে হাজির হয়েছেন? তিনি কি এখন যথেষ্ট বিপ্লবী নন? প্রতিক্রিয়াশীলদের ঘাটানোর যথেষ্ট ক্ষমতা তার নেই?
* প্রথমত এই বিরোধীতা না করা চে কে না জানার ফলেই। আমাদের এখানে চে কে কয়জনই জানে? কিছু না জানলে বিরোধীতা কিভাবে করবে? তবে এরকম হতে পারে : হ্যারি সেলডন বলেছেন: গুয়ে ভরা? ছিঃ ছিঃ, গু-মুত নিয়ে এভাবে কথা বলা ঠিক না। ব্লগটা দিনদিন কি যে হয়ে যাচ্ছে, গু-মুত নিয়েও লোকজন পোস্টাচ্ছে। আপনি বলেছেন,আজিজ মার্কেটে হোসিয়ারি শিল্প বিকাশের সুফল হিসাবে চে'র ছবি কত সহজেই না আমাদের বুকে পিঠে ঠাঁই করে নিয়েছে। কোর্ট পিন সহ নানা সুভ্যেনিরে চে ভাল আইটেম। চে ক্যাপ, চে ক্যাফে, চে শার্ট, চে পাইপ। কত কিছু।
তাতে সমস্যা কোথায়?পৃথিবীর সবচেয়ে ইন্টারেক্টিভ পোস্টার হচ্ছে টি-শার্ট । একবার ভাবুন তো চে র এইসব পন্য বিক্্রি করে যার সংসার চলে তার কথা ! কিংবা যদি বলেন, পুজিবাদীরা পন্য বানাচ্ছে তাহলে তো পুজিঁবাদেরই অসারতা ফুটে উঠে । তাই নয় কি? গ্রহন করা বলেন, ধারন করা বলেন একেকজনের গ্রহন/ধারন করা একেক রকম। কিন্তু বীজ বপন সবাই করবেনা তা সম্ভবও নয় । একটি সমাজে তা খুব অল্প মানুষই থাকেন। তারা কাজ করে যায় নিরন্তর বিজয়ের দিকে।
সুতরাং হেজিমনি ক্রিয়েট না করে আরো স্পষ্ট অবস্থান নিতে শিখেন।
১৭ ই জুন, ২০০৮ সকাল ১১:২৭

লেখক বলেছেন: ব্রাত্যজন,
আপনে এই অভাজনের উদ্দেশে এত কথা খরচ করছেন জাইনা ভীষণ পুলকিত হইলাম।
দুই তিনটা কথা বলবো মাত্র।
'সক্রিয় মার্কসবাদী' ও 'মতবাদের প্রবক্তা' এই কথা দুইটাকে যদি আপনের জটিলতা জনিত জটিলতা মনে হয় তাইলে তো আপনের লগে আর কোনো কথা চলে না। মানে আপনের আলাপ আমি বুঝবো যদি আপনে এই দুইটার পার্থক্য না বুঝেন।
তবু কিছু বিষয় নিয়া জানার ইচ্ছা হইলো, 'নেতা', তাত্বিক এইসব বিষয় নিয়া জানতে চাই। কোন কোন বই পড়লে সুবিধা হবে জানাইয়েন।
একটি পরিসংখ্যান দিয়েন বিশ্বে মোট কতজন লোক চে' আঁকা টি শার্ট, ক্যাপ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। চে তার স্টাইল দিয়ে কতজন মানুষের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করছেন সেটা তাহলে বোঝা যাবে।
শেষ কথা, এইটা আসলে হেজিমনি না। কাউন্টার-হেজিমনি।
২৮. ১৭ ই জুন, ২০০৮ রাত ৩:৪২
comment by: পি মুন্সী বলেছেন: লেখক মাহবুব বলছেন, "আপনার মন্তব্য চিন্তা ও আলোচনাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য যথেষ্ট। সত্যি বলতে আপনার সঙ্গে আমার দ্বিমত সামান্য। তবু কিছু কথা বলবো। একটু সময় নিয়ে"। আপনার কথা শুনার জন্য অপেক্ষা করে থাকলাম।
১৭ ই জুন, ২০০৮ সকাল ১১:৩০

লেখক বলেছেন: অবশ্যই। আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রয়োজনীয় মনোযোগ জোগাড় করতে পারছি না বলেই দেরি করছি।
২৯. ১৭ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:০৫
comment by: হাসান বিপুল বলেছেন: ব্যার্থ প্রেমই নাকি সাচ্চা প্রেম। সফল প্রেমের উপন্যাস মানেই ট্র্যাজেডি। ইতিহাসে তাকিয়ে দেথুন।

"সফল প্রেমের" গল্প মানে শেষমেস বাজার খরচ আর সফল বিপ্লবের চেহারা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ রাষ্ট্রনায়ক অথবা বেশ কয়েকটি প্রশ্নবোধক যুক্ত শাসনকাল।

চে সেই অর্থে সম্ভবত বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার কারনেই সফল আইকন।
১৮ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৬

লেখক বলেছেন: ভাল পর্যবেক্ষণ।
৩০. ১৭ ই জুন, ২০০৮ দুপুর ১:৫১
comment by: সাইফ সামির বলেছেন:

...চে আইকন, চে কর্মী...
১৮ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৮

লেখক বলেছেন: হ। তাতো বটেই।
৩১. ১৭ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:০৮
comment by: মেহরাব শাহরিয়ার বলেছেন: চে কে নিয়ে লেখা এতগুলো পোস্টের মাঝে এই প্রথম কোন পোস্টে কমেন্ট করার জন্য মন সায় দিল । অন্য পোস্টগুলোতে চে র কীর্তি স্মরণ করে দু'চারটি কথা বলতে গিয়েও থেমে গিয়েছি ।

হঠাৎ অনুভব করলাম, চে কে ভালোবাসা ফ্যাশনের যে সর্বগ্রাসী বৃত্ত আমিও হয়তো তার মাঝেই আটকা পড়ে আছি ।

প্রশ্ন হলো , চের আদর্শ কি আমাদের একটুও নাড়া দেয় না ? উত্তর হলো ....... অবশ্যই করে । কিন্তু সেটার পদ্ধতিগত দিকটা নিয়ে অনেকগুলো অসঙ্গতিগুলো খুব প্রকটভাবে ধরা পড়ে ।

কাউকে যখন খুব ভালোবেসে ফেলা যায় , তখন আমরা অন্ধভাবে তার সবকিছুই ভালোবাসতে শুরু করি ।

আমরা কি কেউ আগে চে'র আদর্শকে ভালোবেসে তারপর চে কে ভালোবেসেছি ?
নাকি চে কে ভালো লাগা থেকেই কি তার আদর্শের দিকে ভালোলাগাটা এসে গেছে , যার বাস্তবায়ন নিয়ে আমরা কখনোই উৎসাহী নই ।

আদর্শের মত এত বড় একটা জিনিস কি ফ্যাশনের সাথে কোনভাবেই মানিয়ে নেয়া যায় ?

জবাবটা আমার কাছে নেই , তাই চে কে ভালোবাসলেও তাকে ভালোবেসে লেখা কোন পোস্টে আমার মন্তব্য নেই
১৮ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:৪১

লেখক বলেছেন: কিন্তু যখন ফ্যাশনই আমাদের আদর্শ হয়ে যায় বা আদর্শ হয়ে যায় স্রেফ একটা কোর্ট পিন বা টিশার্ট-এর মতো সামান্য ব্যাপার?

সহমত মেহরাব।
৩২. ১৭ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৫:০১
comment by: পি মুন্সী বলেছেন: মাহবুবের চে সংক্রান্ত এই ব্লগে চে এর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ - এরই আধিক্য, প্রধান বিষয়। ভালোবাসার প্রকাশে আধিক্য খারাপ নয়, এটা কম কিছুও নয়। অনেকে মন্তব্য থেকে চে এর যে একটা আদর্শ ছিল বা আছে তার খবরও মিলে। চে সারা জীবনে কতকিছু করেছেন, তার ফিরিস্তিও এখানে মিলে। কিন্তু চে এর আদর্শটা কী? চে এর কোন রাজনৈতিক চিন্তাটা বিপ্লবী রাজনীতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ? এসবের হদিস না নিলে এটা ভালোবাসার উচ্ছ্বাস পর্যন্তই থেকে যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

মেহরাব শাহরিয়ার প্রশ্ন রেখেছেন, "আদর্শের মত এত বড় একটা জিনিস কি ফ্যাশনের সাথে কোনভাবেই মানিয়ে নেয়া যায় ?" আদর্শ বলতে চে এর প্রতি আমাদের গভীর ভালোবাসা বুঝলে এটা কেবল ফ্যাশন হিসাবেই টিকে যাবে। আপনার মানা না মানার খটকাটা ওখানে।
১৮ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:৪৩

লেখক বলেছেন: ভাল বলেছেন। ধন্যবাদ।
৩৩. ১৭ ই জুন, ২০০৮ রাত ১১:৫২
comment by: ফাহমিদুল হক বলেছেন: ভালো প্রশ্ন তুলেছেন। এই প্রশ্নগুলো ঘুরেফিরে আসে, ব্লগে তুলে আনার জন্য আপনি ধন্যবাদার্হ।
আমার মনে হয় ফারহান দাউদের মন্তব্য আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর এসে গেছে। আমিও ফারহানের মতোই ভাবছি।
১৮ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:৪৬

লেখক বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ফাহমিদ ভাই।
৩৪. ১৮ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:১৩
comment by: রিফাত হাসান বলেছেন: পি মুন্সির মন্তব্যে জরুরী ব্যাপার এসেছে। অনেকাংশেই একমত তার সাথে।
১৮ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৬

লেখক বলেছেন: হ্যাঁ।
৩৫. ১৮ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৭
comment by: আন্দালীব বলেছেন: আপনি চে'র সাথে সাথে যেই নামগুলা বলছেন মাও, লেনিন বা ক্যাস্ট্রো তাদের প্রত্যেকের শরীরের চারপাশ, ইমেজের চারপাশ একটা ভৌগলিক বাউন্ডারী দিয়ে ঘেরা। চুড়ান্ত পরিনতিতে যারা স্বীয় রাষ্ট্রক্ষমতায় আসছিলেন। শাষক প্রতিভূ হিসাবে চে আমাদের সামনে ছিলেন না। চিরবিপ্লবী হিসেবেই তার প্রস্থান। তার এই অনমনীয় ভঙ্গীটার কারনেই তার প্রতি আলাদা আবেগ কাজ করে। এইসবি ব্যক্তিক চিন্তা....

চে আমার কাছে এক চিরবিপ্লবী।
-----------

আপনার পোষ্টটা ভালো লেগেছে খুব।
১৮ ই জুন, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৯

লেখক বলেছেন: আপনার ভাবনাটা ভাল লাগলো।
চে আমার কাছেও চিরবিপ্লবী। কিন্তু চে মার্কাধারীরা সবাই চিরবিপ্লবী না। চে'কে বিপ্লবের লোগো হিসাবে ভুলভাবে উপস্থাপনের বিরুদ্ধে আমি।
ধন্যবাদ আপনাকে।
৩৬. ২২ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:৪৫
comment by: অনন্যা রহমান বলেছেন: সুন্দর েলখিনর জন্য ধন্যবাদ। এধরেনর চিন্তাশীল আরো লেখা চাই

No comments:

Post a Comment